রাজধানীর প্রথম পানির ট্যাংক ঘিরে মাজার ব্যবসা ও চাঁদাবাজি
পুরান ঢাকার কলতাবাজার এলাকায় রাজধানীর সর্বপ্রথম পানি সরবরাহকারী ট্যাংকটি পরিত্যক্ত হয়ে এখন দখলদারদের হাতে। দখল করে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে মাজার ব্যবসা এবং এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে চাঁদাবাজি। তাছাড়া এটি ঢাকা ওয়াসার অধীনে থাকার কথা থাকলেও বেদখল হওয়ার বিষয়ে জানেই না ওয়াসা। এদিকে মাজার সংশ্লিষ্টরা বলছে, পানির ট্যাংকটি লিজ নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ১৮৬৪ সালে ঢাকা পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর পৌরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য নবাব পরিবার আর্থিক সহায়তা করে। এ অর্থ দিয়ে তখন প্রথম এ পানির ট্যাংকটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
সরেজমিনে দেখা যায়, ট্যাংকটি এখন আর ব্যবহৃত হয় না, রয়েছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। ট্যাংকের নিচে গড়ে তোলা হয়েছে মাজার। একপাশে সীমানাপ্রাচীর ভেঙে করা হয়েছে মাজারে ঢোকার গেট। ভেতরে তৈরি করা হয়েছে তিনটি কক্ষ। ট্যাংকটির সীমানাঘেঁষে বানানো হয়েছে বেশ কয়েকটি দোকান।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এসব দোকান থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা তোলে মাজারের লোকজন। ফুটপাতের পাশে বসা চটপটি-ফুচকার দোকান, ডিমের দোকান থেকেও তোলা হয় চাঁদা। দৈনিক ও মাসিক চুক্তিতে এসব দোকান ও সবজি বিক্রেতাদের থেকে তোলা হয় একশ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়াও সন্ধ্যার পর মাজারের ভেতরে বসে গাঁজাসহ মাদকের আসর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানদার বলেন, ‘মাজারের লোকজন থেকে আমরা দোকান ভাড়া নিয়েছি মাস চুক্তিতে। জায়গাটা তাদের না আমরাও জানি। শুনেছি ওয়াসার জায়গা এটা। প্রশাসনও তো কিছু বলে না। মাজারের লোকজনই এ জায়গা নিয়ন্ত্রণ করে।’
মাজারের দায়িত্বে থাকা একজন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দরবারের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে রয়েছেন আনিসুল হক নামের এক ব্যক্তি। আর আমরা যারা দিনমজুর রয়েছি তারা দরবারের খেদমত করি। আজ থেকে ৬০ বছর আগে ট্যাংকটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। তখন থেকে এখানে এ দরবার শরীফ রয়েছে। ৯৯ বছরের জন্য এটা লিজ নেওয়া হয়েছিল। যতদূর জানি এটা ওয়াসার সম্পত্তি ছিল। পরে সিটি করপোরেশন নিয়ে নিয়েছে। কিছুদিন পর এটার মেরামতের কাজও করা হবে। তবে নিচে দরবার থাকবে।’
দোকানদার থেকে চাঁদা তোলা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারও কাছ থেকে এমন কিছু নেওয়া হয় না। মানুষ খুশি হয়ে যা দেয় তা নেওয়া হয়। আর সীমানা ঘেঁষে যে চা দোকানদার তিনি ১০০ করে দেন, আমরা যারা দেখাশুনা করি তাদের জন্য।’
পানির ট্যাংকটির পাশের রাস্তায় দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মাজারটিতে সন্ধ্যার পর সিদ্ধির (গাঁজা) আসর বসে। যেহেতু ট্যাংকটি ব্যবহার হয় না; সংশ্লিষ্টরা চাইলে এটি ভেঙে বহুতল পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারে। এমনিতেও পুরান ঢাকায় জায়গা সংকটের কারণে গাড়ি পার্ক করা কষ্টসাধ্য।
ঢাকা ওয়াসার ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শহীদ উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ওই ট্যাংকটা এখন অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। দখলের বিষয়টা জানা নেই। আমরা দেখব বিষয়টা। তেমন হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’