রাজপথে আন্দোলনে একমত বিএনপি-বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে ‘রাজপথে আন্দোলন’ গড়তে একমত হয়েছে বিএনপি-বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। আজ বুধবার নিজেদের সংলাপের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, এখন আমরা যারা একমত হচ্ছি তারা আমরা যৌথভাবেই আন্দোলন শুরু করব। নিজের জায়গা থেকে আন্দোলন শুরু করবো। আন্দোলন যুগপত হবে এবং আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ধারা নির্ধারিত হবে যে, শেষ পর্যন্ত সেটা কীভাবে রুপ নিচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক দলগুলো একজোট হয়ে কাজ করলে আমরা অবশ্যই এই দুঃশাসনকে পরাজিত করে জনগণের বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হবো। মানুষ দেখতে চায় যে, আজকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে ঐক্যবদ্ধ আছে। মানুষ দেখতে চায় এই দুঃশাসন থেকে রেহাই পাবার জন্য বিরোধী দলগুলোকে জনগণের পক্ষে একটা কার্য্কর-সমন্বিতভাবে যুগপত ধারায় মাঠের একটা কার্য্কর ঐক্য।
সাইফুল হক বলেন, আজকে আলোচনায় বিএনপির নেতৃবৃন্দের সাথে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির যুগপথ ধারায় আন্দোলনের ব্যাপারে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভবিষ্যতে এটাকে আমরা আরও জোরদার করবো এবং আন্দোলনের কাজটাকে আরও সমন্বিত করবো।
বাম ঘরানার এই নেতা বলেন, আমরা মনে করি, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণআন্দোলন ও গণসংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে যদি পদত্যাগে বাধ্য করা না যায়, মানুষের ভোটের অধিকার বলি, গণতান্ত্রিক অধিকার বলি, অথবা একটা তদারকির সরকার, অবাধ গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন অথবা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যত কোনটাই বাংলাদেশে নিশ্চিত করা যাবে না। সেই কারণের জন্য আমরা আলাপ-আলোচনা করে আন্দোলনে ঐকমত্য হয়েছি।
তিনি বলেন, দেশবাসীকে আমরা আহ্বান জানাতে চাই, আজকে বিরোধী দলগুলো যে উদ্যোগ নিয়েছে, মানুষ তার নিজ নিজ জায়গা থেকে এই উদ্যোগের পাশে দাঁড়াবেন এবং তারা আন্দোলনের সাথী হবেন।
যুগপত আন্দোলনের অর্থ বিএনপি-বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করবে না, তবে একই লক্ষ্য অর্জনে তারা কর্মসূচি আলাদাভাবে পালন করলেও তাতে সমন্বয় থাকবে।
বিএনপি ২০ দলীয় জোটে রয়েছে, যেখানে তাদের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ইসলামী দল রয়েছে। আবার গণফোরামসহ ভিন্ন কয়েকটি দলকে নিয়ে জাতীয় ফ্রন্টও গড়ে তারা, যদিও তা এখন নিষ্ক্রিয়।
বাম গণতান্ত্রিক জোট থেকে বেরিয়ে আসা জোনায়েদ সাকির দল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে থাকা আ স ম আবদুর রবের জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ গঠনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মতামত তুলে ধরে সাইফুল হক বলেন, শুধু সরকার পরিবর্তনের জন্য আমাদের এই আন্দোলন নয়। পুরো রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার, পরিবর্তন, একই সাথে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কারসহ এখানে রাষ্ট্র প্রশাসনের গণতান্ত্রিক যে সংস্কার এবং আমাদের এখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাষ্ট্র যেভাবে নাগরিকদের ওপরে একটা সহিংস ভূমিকায় আবির্ভূত হয় এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে যেভাবে দলীয় বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করা হয়-এই জায়গাগুলোর ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন।
তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে নির্বাহী বিভাগ এখন যেভাবে বিচার বিভাগ বা আইন প্রণয়ন বিভাগসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের ওপরে যেভাবে তারা (সরকার) কর্তৃত্ব করে, এটা আধুনিক রাষ্ট্রের সাধারণ যে ভারসাম্য তার পরিপন্থি। এই সমস্ত বিষয়ে আমরা গুণগত পরিবর্তন, সাধারণ নির্বাচনের পাশাপাশি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের বিষয়েও আমরা আলোচনা করেছি। আমরা পুরো রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থার একটা গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রয়োজন। আমরা আজকের আলোচনায় সংকট উত্তরণে আমাদের দলের ৩১ দফা বিএনপির নেতৃ্বৃন্দের কাছে পেশ করেছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, যেসব সমস্ত সংস্কারের কথাগুলো সাইফুল হক বলেছেন, আমরাও যে সমস্ত কথা বলছি। এই সব সংস্কার নিয়ে এ বিষয়ে আমরা আরও বিশদ আলোচনা করবো এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যে এ ব্যাপারেও যৌথভাবে আমাদের বক্তব্য নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হবো।
আলোচনার জন্য বেলা সোয়া ১টায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাবেক সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন দলটির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আবু হাসান টিপু, আনছান আলী দুলাল, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীর মোফাজ্জল হোসেন মোস্তাক, মাহমুদ হোসেন ও এ্যাপেলো জামালী।
সোয়া একটা থেকে পৌনের দুই ঘণ্টা এই সংলাপ হয়। সংলাপের পর দুই দলের প্রধান সাংবাদিকদের কাছে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরেন।
গত ২৪ মে বিএনপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আন্দোলনের ঐক্য গড়ে এই সংলাপের সিদ্ধান্ত নেয়। ওইদিন তারা নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে এবং ২৭ মে ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশের লেবার পার্টির সাথে সংলাপ করেছে বিএনপি। গতকাল করেছে গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে সংলাপ করে তারা।