লেখক মুশতাক আহমেদকে হত্যা করা হয়েছে : মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘যারা স্বাধীনভাবে গণমাধ্যমে নিজের মত প্রকাশের চেষ্টা করছে, তাদের জীবনে নেমে আসছে এক ভয়ঙ্কর দুর্বিষহ পরিণতি। হয় তাদের গুমের শিকার হতে হচ্ছে, নতুবা সরকারি হেফাজতে প্রাণ দিতে হচ্ছে। তার সর্বশেষ নির্মম শিকার হলেন মুশতাক আহমেদ। মূলত মুশতাক আহমেদের ওপর কারাগারে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’
‘মুশতাক লুটপাটকারী কিংবা কালোবাজারি, সন্ত্রাসী ও ডাকাত ছিলেন না, বরং ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের মেধাবী ছাত্র মুশতাক আহমেদ (৫৩) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চিন্তার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে যাওয়ায় অকালে তাঁর জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দেওয়া হলো’, যোগ করেন বিএনপির মহাসচিব।
আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হওয়া লেখক মুশতাক আহমেদ গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান। তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে ছিলেন। এই মৃত্যুর প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে তাঁর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়েছে। তবে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
বিএনপির মহাসচিব আজ সরকারি হেফাজতে কারাগারে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন তিনি। পাশাপাশি মুশতাক আহমেদের কারান্তরীণ অবস্থায় মৃত্যুতে স্বচ্ছ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করার দাবি জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংগতি, অসংগতি, নিয়ম-অনিয়ম, কীর্তি-অপকীর্তি ইত্যাদি বিষয়ে স্বাধীনচেতা মানুষের অভিমত, বিশ্লেষণ ইত্যাদি প্রকাশের সুযোগ আজ গণতান্ত্রিক বিশ্বে সর্বজনস্বীকৃত। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমান কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী সরকার তাদের অপকর্ম ও ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সমালোচনা যাতে প্রকাশ না হয়ে পড়ে সেজন্য নানা কালাকানুনের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মন্তব্য লেখা বা পোস্টকে কোনোভাবেই বরদাস্ত করছে না।’
মুশতাকের এই নির্ভিক আত্মদানের মধ্য দিয়েই দেশের তরুণ সমাজ জেগে উঠবে এবং দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক স্বাধীনতাসহ সুশাসন ও আইনের শাসন ফিরে আসবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেন বিএনপির নেতা। তিনি আরও বলেন, ‘মুশতাক একজন সৎ ও সাহসী মানুষ ছিলেন, তিনি চিরদিন অধিকারহারা মানুষের নিকট প্রেরণার আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবেন। তিনি দেশবাসীর প্রার্থনা, চেতনা ও অনুভবে চিরদিনের জন্য বিরাজ করবেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশে আইন-কানুন, সুষ্ঠু বিচারিক ব্যবস্থা না থাকার কারণেই সারা দেশে এক শ্বাসরোধী পরিবেশ বিরাজ করছে। মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। সারা জাতির ওপর ঘোর দুর্দিন নেমে এসেছে। দেশে এখন নব্যবাকশালী শাসন জারি রাখা হয়েছে, যাতে কেউ টু শব্দ করতে না পারে। মানুষকে নিঃশব্দ করতেই গুম, খুন, ক্রসফায়ার, পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুকে রাষ্ট্রীয় জীবনের অনুষঙ্গ করা হয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে সত্য সমালোচনাতেও তারা আঁতকে ওঠে। রাষ্ট্রের সব অঙ্গকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে রূপান্তর করা হয়েছে। নিষ্ঠুর একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের সব বৈশিষ্ট্য এখন ফুটে উঠেছে। রাষ্ট্র ক্রমান্বয়ে মাফিয়ারূপ ধারণ করেছে। সরকার নিজের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে দেশে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতে দ্বিধা করছে না। সরকারের এই রক্তঝরা কর্মসূচির প্রধান শিকার হচ্ছে বিরোধী দল, মত ও স্বাধীন চিন্তার মানুষরা। নজিরবিহীন অপশাসন ও কুকীর্তি নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনার যে ঝড় বইয়ে যাচ্ছে সেটি মানুষের দৃষ্টি থেকে ভিন্ন দিকে সরাতেই জাতীয়তাবাদী শক্তিসহ বিবেকবান, স্বাধীনচেতা অনলাইন ব্লগার ও লেখকদের দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। তবে এই দুর্বিনীত দুরাচারের পরিণতি হবে ভয়াবহ।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মুশতাকের এই মৃত্যুতে সারা দেশের সর্বস্তরের মানুষ ক্ষোভে-বেদনায় ফেটে পড়েছে। মুশতাকের মতো একজন অরাজনৈতিক, নিরীহ এবং নিজস্ব চিন্তায় স্বায়ত্বশাসিত ফেসবুকে ফ্রিল্যান্সার লেখকের মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়, এর সঙ্গে রাষ্ট্রশক্তি জড়িত।’
পাশাপাশি গত বছর মে মাসে মুশতাক আহমেদের সঙ্গে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে আটক করে এখনও কারাবন্দি করে রাখার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অবিলম্বে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের মুক্তি দাবি করেছেন।