রাজশাহীতে করোনা ইউনিটে আরও ১৩ মৃত্যু, মেঝেতে রোগী
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজন করোনা পজিটিভ ছিলেন। অন্যরা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী আজ মঙ্গলবার সকালে এ তথ্য জানিয়েছেন।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক জানান, আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করোনা ইউনিটে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে রাজশাহীর ১২ জন। অপর একজন নাটোরের বাসিন্দা। মৃত ১৩ জনের মধ্যে ছয়জন মারা গেছেন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। এ ছাড়া ২২ নম্বর ওয়ার্ডে চারজন, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে একজন, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে একজন ও ১ নম্বর ওয়ার্ডে একজন মারা গেছেন। মৃত ১৩ জনের মধ্যে পুরুষ ১০ জন ও নারী তিনজন। এর মধ্যে ৬১ বছরের ঊর্ধ্বে নয়জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে একজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে দুজন এবং ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে একজন মারা গেছেন।
এ ছাড়া করোনা পজিটিভ হয়ে যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের সবার বাড়ি রাজশাহীতে। উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া আটজনের মধ্যে সাতজনের বাড়ি রাজশাহী ও একজনের নাটোরে।
হাসপাতাল পরিচালক আরও জানান, ২৪ ঘণ্টায় করোনা ইউনিটে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ৫৬ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৬১ জন। বর্তমানে হাসপাতালের আইসিইউয়ের ২০টি ও কেবিনের ১৫টি শয্যাসহ নয়টি করোনা ওয়ার্ডে ৩০৯ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রোগী আছে ৩৯৩ জন। এর মধ্যে আইসিইউয়ের ২০টি শয্যায় ১৯ জন, কেবিনের ১৫টি শয্যার বিপরীতে ১৬ জন, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে ১৬টি শয্যার বিপরীতে ১৬ জন, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৮টি শয্যায় ৪৮ জন, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৩২টি শয্যার বিপরীতে ৪২ জন, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ৩২টি শয্যার বিপরীতে ৫২ জন, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে ১০টি শয্যার বিপরীতে পাঁচজন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৩২টি শয্যার বিপরীতে ৫৫ জন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৩২টি শয্যার বিপরীতে ৪৯ জন, ১ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৬টি শয্যার বিপরীতে ৪৪ জন এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৬টি শয্যার বিপরীতে ৪৭ জন রোগী ভর্তি আছে। যেসব ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি আছে, সেসব রোগীকে ওই ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের করোনা ইউনিটে বর্তমানে যে ৩৯৩ জন চিকিৎসা নিচ্ছে, তাদের মধ্যে ২৫৪ জনই রাজশাহীর। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৬১ জন, নাটোরের ৩৩ জন, নওগাঁর ৩০ জন, পাবনার সাতজন, কুষ্টিয়ার পাঁচজন, চুয়াডাঙ্গার একজন ও অপর দুজন অন্য জেলার বাসিন্দা।
এদিকে, গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রামেক হাসপাতালের দুটি পিসিআর ল্যাবে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৪৬২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৫২ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৫১ শতাংশ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে রাজশাহী মহানগর এলাকায় ১৪ দিনের সর্বাত্মক লকডাউনের ১২তম দিন চলছে আজ মঙ্গলবার। লকডাউনের ফলে মহানগর এলাকায় ওষুধ ও কৃষিপণ্যের দোকান এবং জরুরি সেবার দোকান ছাড়া সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কথা থাকলেও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ছাড়া অন্যান্য এলাকায় মানা হচ্ছে না এ নিয়ম। সব ধরনের দোকানই খোলা রয়েছে। কাঁচাবাজার নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খোলা থাকলেও সেখানে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। জরুরি সেবা, রোগী পরিবহণ ও কাঁচামাল পরিবহণের সঙ্গে জড়িত যানবাহন ছাড়া মহানগর এলাকার সঙ্গে সারা দেশের সরাসরি বাস ও ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে মহানগর এলাকার বাইরে বানেশ্বর থেকে ঢাকাসহ সারা দেশের বাস চলাচল করছে। সেখান থেকে ছোট ছোট যানবাহনে মানুষ মহানগর এলাকায় প্রবেশ করছে। ফলে লকডাউন কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। নানা অজুহাতে নগরীতে লোকজনের চলাচল বেড়েছে। রিকশা ও অটোরিকশার চলাচলও রয়েছে স্বাভাবিক।