রাজশাহীতে ৯৩ হাজার লিটার ভোজ্যতেল জব্দ, আটক ৪
রাজশাহীতে কাটছে না সয়াবিন তেলের সংকট। চাহিদা অনুযায়ী তেল কিনতে পারছেন না ভোক্তারা। কোনো কোনো দোকানে বোতলজাত তেল পাওয়া গেলেও সঙ্গে কিনতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অন্য পণ্য।
অবৈধভাবে মজুদ করা তেলও বেশি দামে বিক্রি করায় আজ মঙ্গলবার জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারের চারটি গুদামে অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে ৯২ হাজার ৬১৬ লিটার সয়াবিন ও পাম তেল জব্দ করা হয়।
এ সময় অবৈধভাবে ভোজ্যতেল মজুদ করার অভিযোগে চারজনকে আটক করা হয়েছে। এর আগে সয়াবিন তেল মজুদ ও বেশি দামে বিক্রি করার অভিযোগে নগরীর তিনটি দোকানকে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
পুঠিয়ার বানেশ্বরের কয়েকটি গুদামে ভোজ্যতেল মজুদ করেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা, এমন খবরে আজ বিকেলে সেখানে অভিযান চালায় রাজশাহী জেলা পুলিশ। অভিযানকালে বিকাশ সাহার মালিকানাধীন সরকার অ্যান্ড সন্সের গুদাম থেকে ৪৮ ড্রাম সয়াবিন তেল ও ২৬ ড্রাম পামঅয়েল, এন্তাজ হাজির মালিকানাধীন এন্তাজ স্টোরের গুদাম থেকে ২২ ড্রাম সয়াবিন তেল ও ১২০ ড্রাম পামঅয়েল, শৈলেন পালের মালিকানাধীন মেসার্স পাল অ্যান্ড ব্রাদার্সের গুদাম থেকে তিন ড্রাম সয়াবিন তেল ও ১০০ ড্রাম পামঅয়েল এবং রাজিব সাহার মালিকানাধীন রিমা স্টোরের গুদাম থেকে ৪৮ ড্রাম সয়াবিন তেল ও ২৭ ড্রাম পামঅয়েল জব্দ করা হয়।
প্রতিটি ড্রামে ২০৪ লিটার হিসাবে ৪৫৪টি ড্রামে মজুদ করা ৯২ হাজার ৬১৬ লিটার সয়াবিন ও পামঅয়েল জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া পামঅয়েল ভর্তি ৬০টি ড্রাম নিয়ে বানেশ্বরে অবস্থানকারী তেলবাহী একটি ট্রাককে জব্দ করেছে পুলিশ। তেলভর্তি ট্রাকটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাওয়ার কথা থাকলেও কী কারণে বানেশ্বরে অবস্থান করছিল, তা যাচাই করতে ট্রাকচালক ফজলুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
এদিকে, আজ নগরীর সাহেব বাজার ও আরডিএ মার্কেট এলাকার অনেক দোকান ঘুরেও সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি—এমন অভিযোগ করছে ভোক্তারা। আবার কোথাও কোথাও বোতলজাত সয়াবিন পাওয়া না গেলেও বেশি দামে পাওয়া গেছে খোলা তেল। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ভোক্তারা।
অবৈধভাবে সয়াবিন তেল মজুদ ও বেশি দামে বিক্রি করায় আজ নগরীর তিনটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপরিচালক অপূর্ব অধিকারী ও সহকারী পরিচালক হাসান আল মারুফ এই অভিযান পরিচালনা করেন।
অভিযান শেষে সহকারী পরিচালক হাসান আল মারুফ জানান, আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তারা নগরীর সাহেববাজার ও বহরমপুর এলাকায় অভিযান চালান। এ সময় সাহেববাজার এলাকার মেসার্স হুমায়ুন স্টোরে ১৩২ বোতল সয়াবিন তেল মজুদ রেখেছিলেন বিক্রেতা হুমায়ুন কবীর। এই ঘটনায় তাকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে জব্দকৃত ১৩২ বোতল সয়াবিন তেল গায়ের দামে বিক্রি করে ব্যবসায়ীর অর্থ প্রদান করা হয়েছে। একই অভিযানে সাহেববাজার এলাকার মেসার্স পাপ্পু অ্যান্ড ব্রাদার্সকেও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটির মালিক নজরুল ইসলাম নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাড়তি দামে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করছিলেন। এ ছাড়া আলাদা অভিযানে নগরীর বহরমপুর মোড় এলাকার মেসার্স নুরুন্নবি ট্রেডার্সকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাড়তি মূল্যে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করছিলেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক নুরুন্নবী। তাৎক্ষণিকভাবে এই তিন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে জরিমানা আদায় করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা হয়েছে। জনস্বার্থে এই অভিযান চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন সহকারী পরিচালক হাসান আল মারুফ।