বিভিন্ন দেশে আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা থাকলেও তারা বাতিলের কথা ভাবছে : রিজভী
অন্তর্বর্তী সরকার জনআকাঙ্ক্ষার বাইরে অন্য এজেন্ডা নিয়ে কাজ করলে দেশের মানুষ মেনে নেবে না—এমন মন্তব্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, যেসব রাজনৈতিক দলের ভোটের সংখ্যা বেশি নয়, তারাই আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার কথা বলছে। এ ধরনের কোনো পদ্ধতি নিয়ে ষড়যন্ত্র হলে দেশের মানুষ তা নস্যাৎ করে দেবে। তিনি আরও বলেন, অনেক দেশে আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা থাকলেও তারা বাতিলের কথা ভাবছে।
আজ শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের রাজশাহী বিভাগীয় কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিজভী এসব কথা বলেন। রাজশাহী জেলা পরিষদ মিলনায়তনে দিনব্যাপী এই কর্মীসভার আয়োজন করা হয়।
আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রস্তাবের বিরোধিতা করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ভোটারদের পছন্দ অনুযায়ী জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে হবে।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার সরকার ছিল গুম-খুনের সরকার। রাষ্ট্রকে অপরাধী বানিয়েছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। এই সব অপরাধের দোসর প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। শেখ হাসিনার সকল অপরাধ ও গুম-খুন-হত্যার সমর্থন দিয়েছে ও দুষ্কর্মের সাক্ষী হয়েছে ভারত। সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে দেশের আলেম সমাজ। ৫ মে রাতে শেখ হাসিনার সরকার কত আলেম-ওলামাকে খুন করেছে, সেই হিসাব কিন্তু এখনও পাওয়া যায়নি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, এখনও চালের দাম কমেনি, চিনি-আলুর দাম কমেনি। আলুর মৌসুমে আমাদের ৩-৪ টাকা দরে আলু বিক্রি হতো। শেখ হাসিনার কারণে গত বছর থেকে ভারত থেকে আলু আমদানি করতে হয়। এবারও যদি আলু আমদানি করতে হয়, তাহলে মানুষ বলবে ড. ইউনূস সাহেবের সরকারকে আমরা সমর্থন দিয়েছি, তাহলে কী লাভ হলো?
আনুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, কেউ কেউ বলছেন আনুপাতিক হারে নির্বাচন। কেন? আনুপাতিক নির্বাচন কিসের জন্য? এটা কী তৃণমূলের মানুষ বোঝে?
যেসব রাজনৈতিক দলের ভোটের সংখ্যা বেশি নয়, তারা আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার কথা বলছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘যারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চান, যাদের ভোটের সংখ্যা বেশি নয়, তারা এটা একটা কৌশল হিসেবে নিয়েছেন। এটা দেশের মানুষ মেনে নেবে না। এই ধরনের কোনো পদ্ধতি নিয়ে যদি আপনারা ষড়যন্ত্র করেন, এই ষড়যন্ত্র কিন্তু মানুষ নস্যাৎ করে দেবে।’
রিজভী বলেন, ‘যে সংস্কারের কথা বলছেন, এখানে তো তাহলে সংস্কার হবে না। একটা রাজনৈতিক দলকে মানুষ ভোট দেবে, এখন সেই দল ঠিক করবে কাকে কাকে এমপি বানাবে। তাহলে তো কেনাবেচা আবারও শুরু হবে। এই কারণে দু’একটি রাজনৈতিক দল আনুপাতিক নির্বাচনের কথা বলছে। তারা তাদের লাভটা দেখছে। কিন্তু দলের এবং নিজের জনপ্রিয়তা মিলেই তো নির্বাচিত হন। এই ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই।’ তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এটার প্রচলন আছে, কিন্তু তারাও এটা বাতিল করার কথা ভাবছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপি রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুর রহমান চন্দন। প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক কাজী মাওলানা সেলিম রেজা।
সমাবেশে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহবায়ক এরশাদ আলী ঈশা, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক নজরুল হুদা, সদস্য সচিব মামুন অর রশীদ মামুন, জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকারসহ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা বক্তব্য দেন।