রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৯ বছর, বিচার চেয়ে ভুক্তভোগীদের কর্মসূচি
বহুল আলোচিত সাভারে ধসে পড়া রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির নয় বছর আজ রোববার। দুর্ঘটনার পর হত্যা মামলায় ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র একজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আর, ইমারত নির্মাণ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি এখনও।
এদিকে, দিনটি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন আহত শ্রমিক, হতাহতদের পরিবারসহ বিভিন্ন সংগঠন। এখনও বিচার না পেয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন তাঁরা। বিচারের দাবিতে ঘটনাস্থলে প্রতিদিনই ভিড় করছেন শ্রমিকেরা।
দেশের পোশাক শিল্পের ইতিহাসে শোকাবহ দিনটি উপলক্ষ্যে রানা প্লাজার সামনে নিহতদের স্মরণে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন, তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়াসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
এর মধ্যে গতকাল শনিবার রাতে মোমবাতি প্রজ্বালন করে নিহতদের স্মরণ এবং দোষীদের বিচারের দাবি জানানো হয়।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ধসে পড়ে সাভারের আটতলা রানা প্লাজা ভবন। ওই ঘটনায় এক হাজার ১৩৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আহত ও পঙ্গু হন প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। জীবিত উদ্ধার করা হয় দুই হাজার ৪৩৮ জনকে। বাংলাদেশ তো বটেই, গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয় এই শিল্প দুর্ঘটনা।
দেশের ইতিহাসে ভয়াবহ এ ট্র্যাজেডিতে স্বজন হারানো ব্যক্তিরা প্রতিদিন বিলাপ করেন বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে নির্মিত রানা প্লাজার স্মৃতিস্তম্ভের সামনে। রানা প্লাজা ধসের পর নয় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও দায়ীদের বিচারে কোনো অগ্রগতি নেই। এ ঘটনার মূল মামলার ছয় বছর আগে বিচার শুরু হলেও এখনও কোনো সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি।
রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় এ পর্যন্ত ভবনের মালিক রানা, তার পরিবার, সাভার পৌরসভার তৎকালীন মেয়রসহ বিভিন্ন জনের নামে পাঁচটি মামলা হয়।
সাভার মডেল থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ ভবন নির্মাণে ‘অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যার’ অভিযোগ এনে মামলা করেন।
২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে রানার বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়।
২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এসএম কুদ্দুস জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এরপর প্রায় ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। থমকে আছে মামলার বিচার কার্যক্রম। রানা প্লাজা ধস হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ৪১ আসামির মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন কেবল ভবনের মালিক সোহেল রানা। বাকি আসামিদের মধ্যে জামিনে আছেন ৩২ জন, পলাতক ছয় জন ও মারা গেছেন দুজন।
ধ্বংসস্তূপ অপসারণের পর ১৮ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত ভয়াল সেই ঘটনাস্থলের চারপাশটা কাঁটাতার ও টিনের বেড়া দিয়ে রেখেছে জেলা প্রশাসন। এর সামনেই বিভিন্ন সংগঠন তৈরি করেছে শহীদ বেদী।