রোহিঙ্গাদের সব সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সফররত নির্বাহী পরিচালকরা আজ সোমবার জানিয়েছেন, তাঁরা বাংলাদেশে বসবাসরত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য সব ধরনের সহায়তা দেবেন। সেই সঙ্গে তাঁরা গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্জিত অবিশ্বাস্য উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে জানান, এ দেশের আরো অগ্রগতির জন্য তাঁরা সহায়তা অব্যাহত রাখবেন।
ইউএনবি এক প্রতিবেদনে জানায়, বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, তাঁরা বাংলাদেশে ‘অবিশ্বাস্য উন্নয়ন’ প্রত্যক্ষ করেছেন এবং এ দেশ সব সামাজিক সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক এগিয়ে আছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে তাঁরা এসব কথা বলেন বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের জানান।
বাংলাদেশ সরকার তাদের উন্নয়ন নীতিমালা ও বিশ্বব্যাংকের তহবিলে পরিচালিত প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করায় বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ এবং প্রশংসা করেন।
তাঁরা বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও সাহায্যের জন্য কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের দুয়ার খুলে দেয়ায় তারা খুবই মুগ্ধ হয়েছেন। বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তারা শেখ হাসিনাকে জানান, রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতে তাঁরা কক্সবাজার সফর করেছেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতি হলো গ্রামীণ এলাকার মানুষজন যাতে উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে পারে তা নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, ক্ষমতা গ্রহণের পরে সরকার খাদ্য সুরক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, যোগাযোগ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ‘সে কারণেই আমরা এসব খাত বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করেছি,’ বলেন তিনি।
বিভিন্ন আর্থসামাজিক খাতে দেশের উন্নয়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকদের অবহিত করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের স্বাধীনতার পরে দারিদ্র্যের হার ৮২ শতাংশ ছিল যা এখন ২১ শতাংশে নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লক্ষ্য ছিল সাধারণ মানুষের মুক্তি। ‘তিনি দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন,’ বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্য জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে সরকার দেশের রেল, সড়ক, নদী ও বিমান যোগাযোগের উন্নয়ন করছে। তিনি বলেন, যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় সরকারের লক্ষ্য থাকে কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়টি নিশ্চিত করা। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সারা দেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে।
প্রধানমন্ত্রী বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন এবং বলেন, সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি প্রসারিত করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, যুবকদের খেলাধুলায় সম্পৃক্ত করার জন্য সরকার সব উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করছে যা তাদের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদক থেকে দূরে রাখবে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, মুখ্য সচিব এম নজিবুর রহমান, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ, ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ এবং অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক অপর্ণা সুব্রামণি গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন।
সুব্রামণি বলেন যে তিনি কয়েকটি গ্রামাঞ্চল এবং ডিজিটাল কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন এবং দেশে নারীর ক্ষমতায়নের সাক্ষী হয়েছেন।
ব্যাংকের সুদের হার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকগুলোকে সুদের হার এক অঙ্কে আনার নির্দেশনা দিয়েছে।