লালমাইয়ে করোনার নমুনা সংগ্রহ বন্ধ
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/04/02/laalmaai.jpg)
চলতি বছরের মার্চে শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে এবার সংক্রমণের তীব্রতা অনেক বেশি। এরই মধ্যে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে করোনার নমুনা সংগ্রহ বন্ধ করে দিয়েছে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বাগমারা ২০ শয্যা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সে কারণে করোনায় আক্রান্তেরা চিহ্নিত হচ্ছে না।
আক্রান্তদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধিও। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের তৎপরতা না থাকলেও থানা পুলিশের টানা ১২ দিন ধরে মাস্ক বিতরণ কার্যক্রম দৃশ্যমান। এমনকি করোনা আক্রান্তদের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনার ঝুঁকি বাড়ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জয়াশীষ রায়ের লিখিত নির্দেশে গত বছরের ১৯ মার্চ থেকে বাগমারা ২০ শয্যা হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহ শুরু করেন স্বাস্থ্য সহকারী উজ্জ্বল সিংহ। নভেম্বর পর্যন্ত তিনি নমুনা সংগ্রহ করেন ৭৫৮টি। এদের মধ্যে ১৩৮জনের করোনা শনাক্ত হয়। করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান তিনজন। প্রয়োজন না হওয়ায় ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে কেউ নমুনা দেননি। উপসর্গ দেখা দেওয়ায় গত ১৫ মার্চ সামছুল আলম এবং ১৮ মার্চ লালমাই সরকারি কলেজের শিক্ষক সোলাইমান চৌধুরীর নমুনা সংগ্রহ করেন উজ্জল সিংহ। এরপর থেকে বাগমারা ২০ শয্যা হাসপাতালের বর্তমান আরএমও ডা. আনোয়ার উল্যাহর মৌখিক নির্দেশে নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম বন্ধ করে দেন উজ্জ্বল সিংহ।
গত সপ্তাহে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে বাগমারা হাসপাতালে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হন সুমন রায়। পরে তিনি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নমুনা দেন। তাঁর করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। বর্তমানে তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। একই উপজেলার জয়নগর গ্রামের বিজয় লক্ষ্মীর বেশ কিছুদিন জ্বর ছিল। বাগমারা হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহ বন্ধ থাকায় তিনি পরীক্ষা করাতে পারেননি। গতকাল ১ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টায় তিনি মারা যান। রাত সাড়ে ১০টায় তাকে আলীশ্বর মহাশ্মশানে দাহ করা হয়। তাঁর স্বজনেরা জানতে পারেননি মৃত্যুর আগে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন কি না। নমুনা সংগ্রহ বন্ধ থাকায় লালমাই উপজেলার এই রকম অনেকেই উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও করোনা পরীক্ষা করাতে পারছেন না।
স্বাস্থ্য সহকারী উজ্জ্বল সিংহ বলেন, ‘গত বছর তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেএম ইয়াসির আরাফাত স্যার ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জয়াশীষ রায় স্যারের লিখিত নির্দেশ পেয়েইে নমুনা সংগ্রহ করেছি। কিন্তু বর্তমান আরএমও ডা. আনোয়ার উল্যাহ স্যারের মৌখিক নির্দেশে গত ১৮ মার্চ-এর পর থেকে নমুনা সংগ্রহ বন্ধ রেখেছি। আমার মোবাইল নাম্বার সাধারণ মানুষের কাছে থাকায় প্রতিদিন কমপক্ষে ১০/১৫ জন রোগী নমুনা নেওয়ার জন্য ফোন করে। উজ্জ্বল সিংহ অভিযোগ করে বলেন, এক বছরে আমি মোট ৭৬০টি নমুনা সংগ্রহ করেছি। অথচ সরকারি আর্থিক বরাদ্দ থেকে আমাকে একটি পয়সাও দেয়নি কর্তৃপক্ষ।’
লালমাই উপজেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক কাজী মেহেদী হাসান বাপ্পী বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ১ এপ্রিল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব পর্যায়ের সভা/সমাবেশ স্থগিত করেছে লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগ।
লালমাই প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল হোসেন বলেন, করোনার প্রার্দুভাব বাড়তির এই সময়ে লালমাইয়ে নিয়মিত উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা খুব প্রয়োজন ছিল। পুলিশের মাস্ক, লিফলেট বিতরণ ও সচেতনতামূলক মাইকিং ছাড়া এই উপজেলায় করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে উপজেলা প্রশাসনের কোন তৎপরতা নেই। নমুনা সংগ্রহ বন্ধ করায় লালমাইয়ে করোনা সংক্রমণ অনেক বেড়ে যেতে পারে। দ্রুত নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম চালু করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষে ১২ দিন ধরে বাগমারা বাজারসহ উপজেলার তিনটি স্পটে জনসচেতনতামূলক মাইকিং চলছে। লালমাই থানার উদ্যোগে প্রায় দুই সহস্রাধিক মাস্ক বিতরণ করেছি।
বাগমারা ২০ শয্যা হাসপাতালের আরএমও ডা. আনোয়ার উল্যাহ বলেন, হাসপাতালে এমটি ল্যাব পদ সৃষ্টি হলেও শুরু থেকেই পদটি শূণ্য রয়েছে। এই পদে জনবল দিলে নমুনা সংগ্রহ শুরু করা সম্ভব হবে। কারও উপসর্গ দেখা দিলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে নমুনা দিতে পারবে।
উল্লেখ্য, গতকাল ১ এপ্রিল পর্যন্ত লালমাই উপজেলার মোট তিন হাজার ৬৭০ জন করোনার টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন। আগামী ৬ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম ডোজের টিকা প্রদান কার্যক্রম চলবে। আগামী ৭ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কথা রয়েছে।