শরীয়তপুরে হোম কোয়ারেন্টিনে না থাকায় জরিমানা
শরীয়তপুর সদর উপজেলার কানার বাজার এলাকায় হোম কোয়ারেন্টিনে না থাকায় লিটন বেপারি নামের এক সৌদি আরব প্রবাসীকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমান করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহাবুর রহমান শেখ পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম উদ্দিনকে নিয়ে এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
এদিকে শরীয়তপুরে ফিরে আসা প্রবাসীর সংখ্যা বেড়ে চলছে। প্রবাসীসহ করোনা সন্দেহে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৩৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে বিদেশ থেকে আসা ২৭ জনকে কোয়ারেন্টিন থেকে মুক্ত করা হয়েছে। এখন তারা সাধারণ মানুষের মতো স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারবে বলে জানান জেলা সিভিল সার্জন।
এখন শরীয়তপুরে হোম কোয়ারেন্টিনে ২১০ জন রয়েছে। সরকারি বেসরকারিভাবে মানুষের মধ্যে জেলাপর্যায়ে চলছে সচেতনামূলক লিফলেট বিতরণ।
প্রবাসীদের বেশিরভাগই ইতালি থেকে এসেছেন এবং যাদের বেশিরভাগই নড়িয়া উপজেলার বাসিন্দা। তবে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা বিদেশফেরত বেশিরভাগ প্রবাসীই মানছেন না স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা। প্রবাসীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদের পরিবার ও এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইতালিতে করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ও ইতালিফেরত তিন ব্যক্তি বাংলাদেশে এসে স্বজনসহ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবরে প্রবাসীদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ। যেসব প্রবাসী দেশে ফিরেছেন তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা থাকলেও বিদেশফেরত অধিকাংশ প্রবাসীই মানছেন না স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা। তাঁরা বাড়িতে না থেকে হাটবাজারে ঘুরছেন, চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছেন আর মিশছেন বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে।
তবে শরীয়তপুরে ফিরে আসা কয়েকজন প্রবাসী জানালেন, দেশে এসে এলাকায় বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ছেন। তারা সুস্থ রয়েছেন। দেশের মাটিতে এসেছেন সুস্থ থাকার জন্য। হোম কোয়ারেন্টিনের নামে তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, যারা এসেছেন তাদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা এখনো ভালো রয়েছে। তবে তারা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে প্রতি ইউনিয়নে তিনজন স্বাস্থ্যকর্মীকে পর্যবেক্ষণ, নতুন প্রবাসী আগমন ও সার্বিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয় অবহিত করার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে।
শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডা. এস.এম. আব্দুল্লাহ্ আল মুরাদ বলেন, ‘শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঁচ শয্যার ও প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচ শয্যার করে আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। এ ছাড়া কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য ১০০ শয্যা প্রস্তুত করার কাজ চলছে।’
সিভিল সার্জন আরো বলেন, ‘কোয়ারেন্টিনে রাখা প্রবাসীদের নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীরা নানা বিড়ম্বনার মুখোমুখি হচ্ছেন। তবে সব ধরনের বাধা অতিক্রম করে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা মাঠে থাকবেন।’
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার এবং সচেতন হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, যেসব প্রবাসীরা স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মানবেন না প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে ‘সংক্রমণ রোগ নিরোধ আইন’ প্রয়োগ করা হবে।