শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুই সপ্তাহ বন্ধের দাবি মির্জা ফখরুলের
দেশে যাদের করোনাভাইরাস শক্ত হয়েছে বিমানবন্দরে তাদের রোগ শনাক্ত না হওয়া, সরকারের ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানী নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে সরকারের ব্যবস্থা যথাযথ নয়। দেশের বিমানবন্দরগুলোতে স্ক্রিনিং ব্যবস্থা না থাকা সবচেয়ে ঝুঁকির এবং স্থল বন্দরগুলোতে কোনো স্ক্রিনিং ব্যবস্থা নেই, যা আতঙ্কের। করোনা নিয়ে সরকারের ব্যর্থতা জনগণ কখনোই ক্ষমা করবে না। করোনার কারণে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির আগামীকাল বুধবারের সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দুই সপ্তাহ বন্ধের দাবিও করেন বিএনপির মহাসচিব।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশ আজ করোনাভাইরাসের শিকার। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী অন্তত তিনজন নাগরিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন। গতকালও বিদেশ প্রত্যাগত আরো তিনজন বাংলাদেশিকে ভাইরাসে আক্রান্ত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমরা এবং দেশের অনেক বিশেষজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠান গত বেশ কিছু দিন ধরে এই সমস্যার সম্ভাবনার কথা বারবার বলার পরও সরকার শুধু জনগণকে আশ্বস্তই করেছে, কাজের কাজ যে কিছু করেনি তার প্রমাণ হলো
১. ইতালি থেকে ঢাকা প্রত্যাগত দুই ভাইয়ের রোগ বিমানবন্দরে শনাক্ত হয়নি।
২. দেশের ফেরার চারদিন পর যখন তাদের অবস্থার অবনতি ঘটে তারাই চিকিৎসায় উদ্যোগী হয়েছেন, তখন সরকার তাদের হাসপাতালে স্থানান্তর করেছে। কিন্তু ইতিমধ্যে তাদের একজনের স্ত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
৩. আক্রান্তদের সংস্পর্শে যারা এসেছিল তাদের তৎক্ষণাৎ কোয়ারেন্টাইনে না নেওয়া সরকারের আরেকটি ব্যর্থতা। তিনদিন পর মাত্র গতকাল এমন ৪০ জনকে কোয়ারেন্টাইনে নেওয়ার কথা জানা গেল।
৪. যে ফ্লাইটে তারা ঢাকা এসেছেন সেই ফ্লাইটের অন্যান্য যাত্রীরা, বিশেষ করে যারা কাছাকাছি বসেছিলেন, দীর্ঘ ভ্রমণের সময় তাদেরও আক্রান্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
৫. করোনাভাইরাসের ব্যাপারে জনসচেতনতা নিশ্চিত করার জন্য মিডিয়াসহ সরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেমন তরিৎ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন ছিল তাও নেওয়া হয়নি। মুজিববর্ষ পালনের ডামাডোলে জনস্বার্থ অবহেলা করে সরকার দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে।
৬. করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যে প্রাক-প্রস্তুতি প্রয়োজন ছিল তাও নিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের প্রয়োজন বাড়বে জানা সত্ত্বেও তা যথেষ্ট পরিমাণে আমদানি কিংবা উৎপাদনের কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় গত পরশু সন্ধ্যার মধ্যেই বাজারে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। চার-পাঁচ টাকার মাস্ক ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে এবং সন্ধ্যার পর বাজারে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাওয়া যায়নি। ফলে লাখো মানুষ বিনা মাস্কে এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজারে জীবিকার তাগিয়ে জনবহুল স্থানে গমনাগমন করে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিতে বাধ্য হয়েছে।
৭. এখন পর্যন্ত সামান্য যে কটি হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার কথা বলা হচ্ছে সেগুলোর মান এবং আক্রান্তদের সুচিকিৎসা দেওয়ার সামর্থ্য নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন আছে। অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে ওষুধ, যন্ত্রপাতি, ডাক্তার ও নার্সদের প্রশিক্ষণ এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়ার জরুরি দায়িত্ব সরকার পালন করতে পারেনি। ফলে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়লে নিশ্চিতই দেশবাসী গণহারে অকাল মৃত্যুর শিকার হতে পারে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্ত রোগী এবং সম্ভব্য আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা এবং ভাইরাসের প্রকোপ যাতে না বাড়ে তার জন্য সতর্কতা ও প্রতিরোধমূলক যাবতীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে সরকারের ব্যর্থতা জনগণ কখনো ক্ষমা করবে না। কারণ, জনগণ চুয়াত্তরের মতো আরেকবার গণমৃত্যুর শিকার হতে চায় না।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হসান মাহমুদ টুকু, উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খাইরুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন প্রমুখ।