শিপ্রার জব্দকৃত মালামাল র্যাবের কাছে হস্তান্তর করল পুলিশ
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের সহকর্মী শিপ্রা রানী দেবনাথের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও দুই লাখ টাকাসহ জব্দকৃত ২৯ প্রকারের মালামাল র্যাবের কাছে হস্তান্তর করেছে কক্সবাজারের রামু থানা পুলিশ। সিনহা হত্যাকাণ্ডের পরদিন রামু উপজেলার নীলিমা রিসোর্ট থেকে এসব উপকরণ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মালামাল হস্তান্তর করে পুলিশ।
এর আগে গত বুধবার র্যাবের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ-সংক্রান্ত আদেশ দেন কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালত। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশের পক্ষ থেকে বিচারিক হাকিম হেলাল উদ্দিনের আদালতে আবেদন করা হয়েছিল, জব্দ করা ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো তাদের হেফাজতে রাখতে। কিন্তু পুলিশের আবেদন খারিজ করে বিচারক হেলাল উদ্দিন তামান্না ফারাহর আদেশটি বহাল রাখেন। সেই আদেশ অনুবলে ডিভাইসগুলো গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে গ্রহণ করতে যান তদন্তকারী সংস্থার কর্মকর্তা।
পরে র্যাব-১৫ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিমান চন্দ্র কর্মকারের নেতৃত্বে র্যাবের একটি প্রতিনিধিদল রামু থানা থেকে এসব মালামাল গ্রহণ করে। এ সময় রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে র্যাব-১৫ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিমান চন্দ্র কর্মকার জানিয়েছেন, ল্যাপটপ, মোবাইল, হার্ডডিস্ক, দুই লাখ টাকাসহ ২৯ প্রকার মালামাল আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এসব ডিভাইস ব্যবহৃত হয়েছে কি না, তা পরে তদন্ত সাপেক্ষে জানানো হবে। এ নিয়ে কোনো তথ্য গোপন রাখা হবে না।
গত ৩১ আগস্ট অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার পর রামুর খুনিয়াপালং হিমছড়ি এলাকায় মেরিন ড্রাইভ রোডের নীলিমা রিসোর্ট থেকে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্রী শিপ্রা রানী দেবনাথকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে রামু থানা পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করে।
শিপ্রা দেবনাথকে গ্রেপ্তারের সময় তাঁর কক্ষ থেকে উদ্ধার করা ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো মামলার জব্দের তালিকায় আনা হয়নি। পরে রামু থানা কর্তৃপক্ষ পৃথক আরেকটি জব্দ তালিকা তৈরির পর জিডি মূলে বিবিধ ১/২০২০ নম্বর মামলা দায়ের করে শিপ্রার ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও অন্যান্য মালামাল এ মামলার রামু থানার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলামের হেফাজতে রাখে।
রামু থানার মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব র্যাব-১৫-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিমান চন্দ্র কর্মকারকে দেওয়া হলে তিনি রামু থানা কর্তৃক শিপ্রার জব্দকৃত সব মালামাল তাঁর হেফাজতে আনার জন্য ও মামলাটির তদন্তভার নিতে আদালতে আবেদন করেন।
অন্যদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে শুনানিকালে রামু থানার মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর শফিকুল ইসলাম র্যাবের এ আবেদনের বিরোধিতা করে মালামাল তাঁর হেফাজতে রাখতে ও বিবিধ ১/২০২০ নম্বর মামলাটির তদন্ত তাঁর মাধ্যমে অব্যাহত রাখার অনুমতি দিতে আবেদন জানান।
শুনানিকালে রামু থানার তদন্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের কাছে একটি মামলায় কেন দুটি জব্দ তালিকা তৈরি করে বিবিধ মামলাটি করা হলো, এমন প্রশ্ন করলে শফিকুল ইসলামের কোনো সদুত্তর আদালতে দিতে পারেননি।
পরে আদালত উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে শিপ্রা রানী দেবনাথকে গ্রেপ্তারের সময় তাঁর কক্ষ থেকে উদ্ধার করা ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ সব মালামাল হস্তান্তর করতে ও বিবিধ ১/২০২০ নম্বর মামলার তদন্তভার জিআর-৩১১/২০২০ (রামু) নম্বর মামলার বর্তমান তদন্ত র্যাব-১৫-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিমান চন্দ্র কর্মকারকে প্রদানের আদেশ দেন। একই সঙ্গে বিবিধ ১/২০২০ নম্বর মামলা ও শিপ্রার মালামাল তাঁর কাছে রাখার জন্য রামু থানার ইন্সপেক্টর শফিকুল ইসলামের করা আবেদনটি আদালত খারিজ করে দেন।