‘শেখ মুজিবনগর আবাসন প্রকল্প’ থেকে এখনও সরেনি দখলদাররা
‘শেখ মুজিবনগর আবাসন প্রকল্প’ নাম দিয়ে জোর করে দখল করে নেওয়া এক হাজার ৩২০ বিঘা জমি থেকে গত দেড় মাসেও সরে যায়নি দখলদাররা। তারা সেখানে নতুন করে বালি ও মাটি তুলে ঘর তৈরি করছে।
এই জমি খাস এমন দাবি করে গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে তারা দখলে নিয়েছে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের খলিসাখালী গ্রামের এই বিশাল আয়তনের জমি।
এদিকে, গত ২৬ অক্টোবর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ভূমির রেকর্ডিয় মালিক ও দখলদারদের তার অফিসে ডেকে আনেন। সেখানে পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে আলোচনা শেষে জেলা প্রশাসক দখলদারদের জানান, ‘এ জমি খাস নয়, আপনারা ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখল করেছেন। আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে এই জমি ছেড়ে চলে যান। অন্যথায় আমাকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দখলদাররা জেলা প্রশাসকের এই কথার তোয়াক্কা না করে উল্টো সেখানে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করার জন্য আরও ঘর তৈরি করেছে। অপরদিকে, প্রতিদিনই তারা এক থেকে দুই লাখ টাকার মাছ বিক্রি করে তা লুটপাট করে নিচ্ছে।
জমির মালিক ডা. নজরুল ইসলাম, গোলাম মোরশেদ ও মো. আনসার আলী জানান, ৩৩ খণ্ডের এই জমি তারা ক্রয়সূত্রে সিএস ও ডিএস মালিকদের কাছ থেকে পেয়েছেন। সেই হিসাবে ৭০ বছর ধরে তারা জমিতে ধান ও মাছ চাষ করে আসছেন। নিয়মিত ভূমিকরও পরিশোধ করছেন।
অভিযোগ করে তারা বলেন, হঠাৎ করে খলিসাখালী এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি সাতক্ষীরার ঢেবুখালীর আকরাম, নোড়ারচকের রবিউল, আবুল হোসেন, ইশাদ আলী, সিরাজুল ইসলাম, আনারুল, রাজু, রিপন, আনিসুর রহমান, ফিরোজুল, চালতেতলার গোলাম ঢালী, খলিসাখালীর নুরুজ্জামান, সাইফুল ইসলাম ও বাবলুসহ বেশ কয়েকজন দখল করে নেয়। ১০ সেপ্টেম্বর রাতে দখলের সময় তারা ঘের কর্মচারীদের মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। এ ঘটনা নিয়ে থানায় গেলে পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকার করে। একদিন পর ১২ সেপ্টেম্বর আদালতে জমির মালিকরা একটি মামলা করেন।
জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, খলিসাখালীর ওই এলাকায় কোনও খাস জমি নেই। যে জমি আছে তা ব্যক্তি মালিকানাধীন। সামান্য কিছু খাসজমি আছে রাস্তা ও খালের মধ্যে।
দখলদাররা এই বিস্তীর্ণ এলাকার জমি দখলে রাখতে রাতদিন পাহারায় থাকছে। এমনকি সড়কেও নারীরা পাহারায় থাকছে। তারা যেকোন মানুষকে সেখানে ঢুকতে দিচ্ছে না।
এদিকে, প্রকাশ্যে এ ধরনের দখলবাজির মধ্য দিয়ে লুটতরাজ চালালেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
পুলিশ জানিয়েছে, এই বিষয়ে তিনটি মামলা হয়েছে। মামলাগুলি তদন্তাধীন রয়েছে। বিষয়টি যেহেতু জমি সংক্রান্ত সেজন্য আদালতের নির্দেশই আমরা সেখানে কার্যকর করব।
এ বিষয়ে জমির মালিক ডা. নজরুল ইসলাম, গোলাম মোরশেদ ও মো. আনসার আলী জানান, পুরো জমি আমাদের রেকর্ডিয়। চলতি সাল পর্যন্ত ভূমিকরও পরিশোধ করা হয়েছে। এ এলাকার একটি ভূমিগ্রাসী চক্র আমাদের জমি ও মাছের ঘের অস্ত্রের মুখে দখল করে নিয়ে লুটতরাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা বাধা দিতে গেলেই তারা হামলা করছে। এমন অবস্থায় নিজেদের জমি ফিরে পেতে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আবেদন করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সুফল পাইনি।
এদিকে, দখলদারদের দাবি, এই জমি খাস খতিয়ানভুক্ত। তারা এই জমি দখলে রাখার লক্ষ্যে সম্প্রতি ঢাকায় একটি সংবাদ সম্মেলন করেছে। সংবাদ সম্মেলনে এলাকার সুনীল স্বর্ণকার বলেন, ‘আমরা শেখ মুজিব আবাসন প্রকল্প তৈরি করেছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।’
অপরদিকে, জমির রেকর্ডিয় মালিকরা এই জমি ফিরে পেতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে বারবার দৌড়ঝাপ করেও এখন পর্যন্ত কোনও ফল পাননি।