শেষ হলো মণিপুরীদের রাসলীলা উৎসব
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়ের ১৭৯তম মহারাসলীলা উৎসব শেষ হয়েছে। পৃথকভাবে আদমপুরের মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে মনিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায়ের ৩৬তম এবং নয়াপত্তন যাদু ঠাকুর মণ্ডপ প্রাঙ্গণে ছষ্ঠ বারের মতো মহারাস উৎসব পালিত হয়েছে।
মণিপুরী অধ্যুষিত এলাকা মাধবপুরে বৃহস্পতিবার বিকেলে শুরু হয়ে আজ শনিবার সকালে উৎসবের সমাপ্তি ঘটে। এতে হৈ-চৈ, ঢাক-ঢোল, করতালি ও শঙ্খধ্বনির মধ্যদিয়ে শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার জীবনকে নিয়ে চলে রাখাল ও রাসনৃত্য।
গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টায় মাধবপুর শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চে মণিপুরী মহারাসলীলা উৎসব উপলক্ষে আলোচনা সভা ও গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
আলোচনা সভায় মণিপুরী রাসলীলা সেবা সংঘের সভাপতি প্রকৌশলী যোগেশ্বর চ্যাটার্জীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশেকুল হক, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) শহীদুল হক মুন্সী, কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জুয়েল আহমেদ, কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়ারদৌস হাসান, মণিপুরী সমাজকল্যাণ সমিতির সভাপতি আনন্দমোহন সিংহ প্রমুখ।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধান অতিথির বক্তবে বলেন, ‘সব ধর্মের মানুষের সম্মান রেখে শেখ হাসিনার সরকার কাজ করছে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে সরকার বদ্ধ পরিকর। মণিপুরীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে সরকার। সব জাতি ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায়ের মানুষের আগমনে মণিপুরীদের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে।’
প্রতি বছর পূর্ণিমার চাঁদের সঙ্গে মিল রেখে রাস পূর্ণিমা বা রাস উৎসব পালন হয়ে আসছে। কমলগঞ্জের মাধবপুর এলাকায় তিনটি মণ্ডপে রাধা কৃষ্ণের প্রেমলীলার মহাউপাখ্যান মঞ্চায়িত হয়েছে মণিপুরী সম্প্রদায়ের রাস উৎসব। রাস উৎসবের সূচনা হয় বৃহস্পতিবার বিকেলে। ধর্মীয় লগ্ন হিসেব মতে শুক্রবার দুপুর ১টার পর তিনটি মণ্ডপে রাখাল নৃত্যের মধ্যদিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে পাঁচ বছরের অধিক বয়সী কিশোর রাখাল সেজে সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত পৃথক তিনটি কদম গাছের নিচে বাদ্যের তালে তালে বাঁশি নিয়ে নাচতে থাকে।
বছরে একবার মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকজন ধর্মীয় উৎসব পালন করে থাকেন। পাশাপাশি উৎসব উপলক্ষে আত্মীয় স্বজনের সঙ্গেও তাঁরা পরস্পর মিলিত হয়।
মণিপুরী মহারাসলীলা উৎসব উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্যামকান্ত সিংহ জানান, করোনার কারণে এই উৎসব গত বছর সীমিত ছিল। তবে এ বছর করোনা স্বাভাবিক হওয়ায় জনসমাগম অনেক বেশি হয়েছে। সব ধর্মের মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবস্থল মিলন মেলায় রূপ নেয়। রাসলীলায় মঞ্চস্থ মণিপুরী নৃত্য শুধু কমলগঞ্জের নয়, গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ তথা সমগ্র বিশ্বের নৃত্যকলার মধ্যে একটি বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে।
সব শেষে মধ্যরাতে পৃথক তিনটি মণ্ডপে উৎসবের আরেকটি অংশ রাসলীলা শুরু হয়। কিশোরী মেয়েকে কৃষ্ণের প্রেয়সী সাজিয়ে নাচতে থাকে, এরপর অপর কিশোরকে শ্রীকৃষ্ণ সেজে বাঁশি হাতে নিয়ে নাচতে থাকে। এরপর রাধাকে নিয়ে একঝাঁক গোপীনিরা একত্রে নাচতে আসে মণ্ডপের ভেতর। মধ্যরাতে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় মণ্ডপ প্রাঙ্গণ। এভাবে সাড়ারাত নৃত্যের মাধ্যমে রাধা ও কৃষ্ণের মিলন ঘটানোর মাধ্যমে আজ সূর্যোদয়ের পর উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।