সংক্রমণ বাড়লে ভার্চুয়াল কোর্ট নির্ভর হয়ে চলতে হবে : আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকলে ভার্চুয়াল কোর্টের ওপর নির্ভর করে চলতে হবে। সেক্ষেত্রে সারা দেশের আইনজীবীদের পর্যায়ক্রমে ভার্চুয়াল কোর্ট সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আজ রোববার ‘ভার্চুয়াল আদালত পদ্ধতি ব্যবহারে দক্ষতা উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের উদ্যোগে এবং রুল অব ল প্রোগ্রাম, জিআইজেড বাংলাদেশের কারিগরি সহযোগিতায় অনলাইনে এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।
আনিসুল হক বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি বাড়তে থাকলে এই ভার্চুয়াল কোর্টের ওপরই নির্ভর করে চলতে হবে।’ তাই আইনজীবীদের গুরুত্বের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা যদি ভার্চুয়াল কোর্ট পদ্ধতিতে এগিয়ে না যাই, তাহলে আমরাও পিছিয়ে থাকব, সমালোচনার সম্মুখীন হব। বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন ধরে ই-জুডিসিয়ারি চালুর উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছিল। কিন্তু ই-জুডিশিয়ারির নতুন বিষয়গুলো সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণের দরকার ছিল। ঠিক সে সময়ে মার্চ মাসে দেশে করোনা রোগীর সন্ধান পাওয়া গেল এবং সরকার করোনা প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে দেশের সব অফিস বন্ধ করে দিল। তখন প্রধান বিচারপতিও আদালত বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলেন।’
‘আমরা দেখেছি, প্রায় দুই মাস বিচার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিচারপ্রার্থীরা অত্যন্ত কষ্টে দিনযাপন করছেন। অন্যদিকে এও দেখেছি, আমাদের কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতা হলো ৪১ হাজার ৩১৮ জনের। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভাষ্যমতে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দেশব্যাপী কারাবন্দির সংখ্যা ৯৩ হাজার বলে জানতে পারি। এ কারণে কারাগারে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে আমরা বিপাকে পড়ে যেতাম। তাই সে পরিস্থিতি বিবেচনায় করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে আদেশ দিলেন, ভার্চুয়াল কোর্ট নিয়ে আমাদের যে পরিকল্পনা তা সীমিত পরিসরে হলেও চালু করতে। কেননা, কারাগারের যে পরিস্থিতি তাতে অন্তত পক্ষে জামিন আবেদন ও সে আবেদনের শুনানির ব্যবস্থা না করলে, এই সমস্যা আরো বেড়ে যাবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ৯ মে আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০ জারি করা হলো।’
ভার্চুয়াল কোর্টের সফলতা সম্পর্কে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘অন্ততপক্ষে ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর মধ্য দিয়ে কারাগারের ওপর চাপ আমরা কমিয়ে আনতে পেরেছি। আদালত সচল করতে পেরেছি। বিশ্বের অনেক আদালত করোনাকে কেন্দ্র করে বন্ধ হয়ে পড়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আদালত চালাতে পেরেছি। কিন্তু আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ ও ভৌত কাঠামো ছাড়া এই আদালত পূর্ণাঙ্গভাবে চালানো সম্ভব না।’
‘তাই ভার্চুয়াল কোর্টের সাফল্য ধরে রাখতে আজকে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশের এ প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে আইনজীবীদের ভার্চুয়াল কোর্ট ব্যবহারে দক্ষ করে তোলা হবে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০ এ যে প্রাকটিস ডাইরেকশন দেওয়া আছে, তার মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট বিশেষ প্রয়োজনে বা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এর ব্যবহার করতে পারবে। স্বাভাবিক আদালত স্বাভাবিকভাবে চলবে। কিন্তু সেখানে বিশেষ প্রয়োজনে এবং বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এই ভার্চুয়াল আদালত পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। যখন ভৌত কাঠামো এবং প্রশিক্ষিত আইনজীবী তৈরি করতে পারব— তখন আদালতের ও আইনজীবীদের ইচ্ছে পোষণের মাধ্যমে ভার্চুয়াল আদালতকে আরো বিস্তার লাভের জন্য চেষ্টা করা হবে। তাই প্রশিক্ষণ এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে ভার্চুয়াল কোর্টকে আমাদের গ্রহণ করে নিতে হবে।’
পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদীসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলা আইনজীবী সমিতিতে অনলাইনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন আইনমন্ত্রী। এ সময় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. গোলাম সারোয়ার।