‘সংখ্যালঘু’ শব্দটা মুছে ফেলতে হবে : ধর্মপ্রতিমন্ত্রী

ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেছেন, “অনেকে নিজেদের ‘সংখ্যালঘু’ ভাবেন। এ শব্দটা মুছে ফেলতে হবে।” আজ বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতামূলক আন্তধর্মীয় সংলাপ’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান। সংলাপে স্বাগত বক্তব্য দেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবদুল্লাহ আল শাহীন।
ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় তখন কিন্তু হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্ট্রান সবাই রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন করেছে। আমরা সবাই বাংলাদেশি এবং আমরা বাঙালি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ। আমাদের ভেতরে ভেদাভেদের কোনো প্রশ্ন আসতে পারে না। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে থাকতে চাই, বাঙালি হিসেবে থাকতে চাই। এ দেশে বসবাসের জন্য সবারই সম-অধিকার রয়েছে। এ অধিকার আদায়ে আমরা সচেষ্ট থাকব। বাঙালি হিসেবেই আমরা যার যার অধিকার নিয়ে বসবাস করতে চাই। এটাই হলো আমাদের থিউরি।’
ধর্মপ্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সবাইকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে দায়িত্বশীল হতে হবে। মোবাইলে স্ট্যাটাস দেওয়ার সময় অবশ্যই সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। এমন কোনো স্ট্যাটাস দেওয়া যাবে না, যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে কোনো ধরনের আঘাত আসে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ এ বি এম ইসমাইল হোসেন মিয়া ও সাবেক অধ্যক্ষ এম এ বারী, শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম, কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম গোলাম মোরশেদ খান, কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ, গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মোরাদ আলী, গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুস সাকিব, ভাষা শহীদ কলেজের অধ্যক্ষ মুকুল কুমার মল্লিক, ভাওয়াল মির্জাপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অরুণ সাহা, গাজীপুর জেলা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি কামরুল ইসলাম নোমানী, গাজীপুর বাস স্ট্যান্ড জামে মসজিদের খতিব মো. আকতার হোসেন।
ধর্মপ্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশ পা ফেলেছে। ২০৪১ সালে এটা উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে শামিল হবে। এ সম্বন্ধে কিন্তু অনেকের ধারণা অষ্পষ্ট। অনেকে মনে করেন, কী করে এটা সম্ভব যে আমেরিকার মতো এ দেশ হবে, রাশিয়ার মতো এ দেশ হবে, সুইজারল্যান্ডের মতো এ দেশ হবে। আসলেই এটা সম্ভব। আমাদের ১০টি মেগা প্রকল্প আছে। আজকে এক পদ্মা সেতু থেকে আমাদের প্রতিদিন আয় হলো ৩০০ কোটি টাকার উপরে। এতে বছরে যে অঙ্ক দাঁড়ায়, এক সময় আমাদের দেশের বাজেটও এত টাকা ছিল না। এবার চালু হয়েছে মেট্রোরেল। এখানকার আয় থেকে আমাদের জিডিপির দুই ভাগ বেড়ে যাবে। ঠিক তেমনি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেলটি যখন চালু হবে। তখন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে দূরত্ব কমে যাবে প্রায় অর্ধেক। এতে জ্বালানি তেলের খরচ অর্ধেক কমে যাবে। সময়ও লাগবে অর্ধেক। বাকি অর্ধেক সময় মানুষ অন্যকাজে লাগাতে পারবে। অর্থাৎ কাজ করার সময়টা বেড়ে যাবে। এ ছাড়া টানেল ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে নেওয়া ট্যাক্স এর সঙ্গে যোগ হবে। আরও ৭টি মেগা প্রকল্প যখন হয়ে যাবে, তখন আমাদের জিডিপির হার বেড়ে যাবে বর্তমান সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ যখনই এগিয়ে যায়—তখনই এক শ্রেণির মানুষ ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। রাজনীতিতে ধর্ম ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এ জন্য আমাদের ঐকবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।’