সরকার স্বাভাবিক নির্বাচন চায় না : জিএম কাদের
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, ভালো নেই দেশের মানুষ। অর্থনৈতিক সমস্যায় সীমাহীন কষ্টে আছে সাধারণ মানুষ। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। আমাদের দেশেও জ্বালানি তেলের দাম কমানো উচিত। আবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে যে সকল পণ্যের দাম বেড়েছে, সেগুলো যেনো কমানো হয় সেজন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
আজ রোববার বিকেলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পরিষদ এর সাথে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান একথা বলেন।
এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, মহামারি করোনা ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। অনেকের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকের বেতন কমানো হয়েছে। এমন বাস্তবতায় প্রতিদিন নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ হিমশিম অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটে অনেক দেশই সাধারণ মানুষের জন্য কল্যাণমুখী অনেক কর্মসূচি গ্রহণ করে মানুষের সেবা করেছে। মানুষের কষ্ট দূর করতে অনেকভাবেই সাহায্য করেছে বিভিন্ন দেশের সরকার। কিন্তু এমন বাস্তবতায় মানুষের কল্যাণে আমাদের সরকারের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। বাজেটে যেটুকু বরাদ্দ দেওয়া হয়, তাও দুর্নীতির কারণে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে না। মানুষ বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন হলে মেগাপ্রকল্প বন্ধ রাখা উচিত।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র, সরকার ও সরকারি দল এখন এক করে ফেলা হয়েছে।। দেশ ও মানুষের কল্যাণে আমরা সরকারের সমালোচনা করবো, এটা আমাদের কর্তব্য। তাই সরকারের সমালোচনা করলে, রাষ্ট্রবিরোধী মনে করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রবিরোধী মামলা দেওয়া হয়।
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ইভিএম হচ্ছে শান্তিপূর্ণ কারচুপির মেশিন। সরকার নিজের ওপর আস্থা হারিয়ে স্বাভাবিক নির্বাচন চায় না। সরকার ও তাদের কিছু মিত্র ছাড়া আর সকল দলই নির্বাচনে ইভিএম চায় না। কিন্তু নির্বাচন কমিশন হঠাৎ করেই ইভিএম-এ নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলেছে, সকল দল চাইলে ব্যালট-এ নির্বাচন হবে। আসলে নির্বাচন কমিশনের বলা উচিৎ ছিল সবাই চাইলে ইভিএম-এ নির্বাচন করা হবে। কারণ, ব্যালট পেপারে নির্বাচন বিদ্যমান এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য।
নির্বাচন কমিশন ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করবে এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, উদ্দেশ্য ভালো না হলে কোনো কিছুই ভালো হবে না। নির্বাচন কমিশনের সৎ উদ্দেশ্যে কাজ করতে হবে।
চলমান রাজনৈতিক সংঘাতের বিষয়ে সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, নির্বাচন অবাধ ও গ্রহণযোগ্য না হলে সংঘাত আরও বাড়বে। কারণ, আগামী নির্বাচন হবে অস্তিত্বের লড়াই। দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এমন একটি জায়গায় নেওয়া হয়েছে, সবাই প্রতিপক্ষকে শত্রু মনে করছে। সবাই মনে করছে পরাজিত হলে তাকে হত্যা করা হবে, যে পরাজিত হবে সে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আসলে এমন রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমরা চাই না। আমরা চাই সবাই যার যার রাজনীতি করবে। আবার সবার সাথে সবার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে। দেশ ও মানুষের কল্যাণে সবাই এক সাথে কাজ করবে। আমরা চাই, সরকার সবাইকে ডেকে অথবা গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করে শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। অসহিষ্ণু রাজনীতি কারো জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না।
জাতীয় মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট পরিষদের আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন বাবুর সভাতিত্বে, যুগ্ম আহ্বায়ক প্রিয়াংকা সকুল-এর সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা আল মাহমুদ, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, ভাইস চেয়ারম্যান শফিউল্লাহ শফি, মো. জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এম রাজ্জাক খান, জহিরুল ইসলাম মিন্টু, হাফিজ মাস্টার, মঞ্জুরুল হক, যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক সমরেশ মণ্ডল মানিক, সদস্য কাজী মামুন, বজলুর রহক বজলু, রাকিন আহমেদ ভূঁইয়া, পার্টির নেতা ব্যারিস্টার ফাহিম ফয়সাল খান, উজ্জ্বল চাকমা, আব্দুর রহিম রুম্মন।