সাংবাদিক রাহাত খান বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত
একুশে পদকপ্রাপ্ত খ্যাতিমান সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক রাহাত খানকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে।
সাংবাদিক নেতা বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল জানান, আজ বাদ জোহর তিনটি পৃথক নামাজে জানাজা শেষে রাহাত খানকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এর আগে আজ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে নামাজে জানাজা শেষে সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতি অঙ্গনের কর্মীরা মরহুমের কফিনে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান। পরে তেজগাঁও এলাকায় দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ কার্যালয়ে এবং মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পৃথক দুটি নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় প্রেসক্লাবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল ও দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মরহুমের কফিনে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানায়।
এ ছাড়া, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মরহুমের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে তথ্যমন্ত্রী গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে সদ্যপ্রয়াত রাহাত খানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য দেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক শাহেদ চৌধুরীর পরিচালনায় নামাজে জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত শ্রদ্ধা নিবেদনের অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী সাংবাদিক ও সাহিত্যিক সমাজের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য দেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে মরহুমের স্ত্রী অপর্ণা খান সবার কাছে দোয়া চেয়ে বক্তব্য দেন। এ সময় পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
জানাজা শেষে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব শাবান মাহমুদের নেতৃত্বে বিএফইউজে, জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি সাইফুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিনের নেতৃত্বে জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপুর নেতৃত্বে ডিইউজে, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান, প্রেসক্লাব কর্মচারী ইউনিয়ন, উদীচীসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে রাহাত খানের জানাজায় অংশ নেন সাংবাদিক নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, আবদুল জলিল ভুঁইয়া, সাইফুল আলম, শাবান মাহমুদ, কুদ্দুস আফ্রাদ, সাজ্জাদ আলম তপু প্রমুখ।
রাহাত খান দীর্ঘদিন দৈনিক ইত্তেফাকে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি গতকাল শুক্রবার রাতে রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনের নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। তিনি ১৯৪০ সালের ১৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলার পূর্ব জাওয়ার গ্রামের খান পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন।
রাহাত খান ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবন শেষে তিনি ময়মনসিংহ জেলার নাসিরাবাদ কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও চট্টগ্রাম সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে দৈনিক ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি জাতীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। রাহাত খান ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন।
এ ছাড়া রাহাত খান বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৩), সুহৃদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৫), সুফী মোতাহার হোসেন পুরস্কার (১৯৭৯), আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮০), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮২), ত্রয়ী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮) পেয়েছেন।
বর্ণাঢ্য সাংবাদিকতা জীবনে রাহাত খান ছোটগল্প, প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও উপন্যাসের নিপুণ কারিগর হয়ে উঠেছেন। ১৯৭২ সালে তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘অনিশ্চিত লোকালয়’ প্রকাশিত হয়। তাঁর পরবর্তী উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- অমল ধবল চাকরি, ছায়াদম্পতি, শহর, হে শূন্যতা, হে অনন্তের পাখি, মধ্য মাঠের খোলোয়াড়, এক প্রিয়দর্শিনী, মন্ত্রিসভার পতন, দুই নারী, কোলাহল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।