‘সাংসদ’ আর লিখবে না প্রথম আলো : আদালতে প্রথম আলোর আইনজীবী
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/02/07/high-court.jpg)
দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা সংসদ সদস্যদের (এমপি) নামের আগে ‘সাংসদ’ শব্দের পরিবর্তে এখন সংসদ সদস্য শব্দ ব্যবহার করবে। হাইকোর্টকে প্রথম আলো পত্রিকার আইনজীবী এ তথ্য জানিয়েছেন। আজ বুধবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়ার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এ বিষয়ে দায়ের করা রিটের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
আইনজীবী ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান আদালতে বলেন, প্রথম আলো এরই মধ্যে সাংসদ শব্দের পরিবর্তে সংসদ শব্দ ব্যবহার শুরু করেছে। এখন থেকে সাংসদ শব্দের পরিবর্তে সংসদ সদস্য পদ ব্যবহার করবে।
পরে আদালতে দীর্ঘদিন ধরে প্রথম আলো কেন সাংসদ শব্দ ব্যবহার করছে তার লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলেন। একইসঙ্গে রিটের আদেশের জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য করেন আদালত। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব।
গত ১৬ মে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় সংসদ সদস্যদের (এমপি) নামের আগে ‘সাংসদ’ শব্দ ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করা হয়।
ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার ও ব্যারিস্টার মো. মাজেদুল কাদের হাইকোর্টে এ রিট দায়ের করেন।
প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক, তথ্য ও সম্প্রচার সচিব, আইন সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকসহ ১০ জনকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
এর আগে, গত ২৭ এপ্রিল দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় সংসদ সদস্যদের (এমপি) নামের আগে ‘সাংসদ’ শব্দ ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।
ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার ও ব্যারিস্টার মো. মাজেদুল কাদের এ নোটিশ পাঠান।
ওই দিন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব বলেছিলেন, অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী সংবিধান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন। সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে ‘জনগণের অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তি স্বরূপ এই সংবিধানের প্রাধান্য অক্ষুণ্ন রাখা, ইহার সংরক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান আমাদের পবিত্র কর্তব্য’। অনুচ্ছেদ ২১ অনুযায়ী সংবিধান ও আইন মান্য করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য।
সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সর্বমোট ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের সমন্বয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ। সংবিধান অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের সদস্যদের ‘সংসদ সদস্য’ হিসেবে অভিহিত করতে হবে। ইহা একটি সাংবিধানিক পদ এবং সংসদ সদস্যদের অন্য কোনো নামে সম্বোধন করা অসাংবিধানিক। কিন্তু বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা দীর্ঘদিন যাবৎ ‘সংসদ সদস্য’ শব্দ ব্যবহার না করে ‘সাংসদ’ শব্দ ব্যবহার করে আসছে। এটি বাংলাদেশ সংবিধানের চরম লঙ্ঘন, অবমাননা ও চরম ধৃষ্টতা ছাড়া কিছু নয়। এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার কর্তৃক রুলিং জারি করে বলা হয়েছে ‘সংসদ সদস্য’ একটি সাংবিধানিক পদ এবং ‘সাংসদ’ শব্দ ব্যবহারের সুযোগ নেই। অথচ প্রথম আলো সংবিধান এবং স্পিকারের রুলিং উপেক্ষা করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বহুদিন যাবত সংবিধান লঙ্ঘন করে আসছে, যা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ক (১) (খ) অনুযায়ী রাষ্ট্রদ্রোহিতার সর্বোচ্চ দণ্ডনীয় অপরাধ।
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা অব্যাহতভাবে অসাংবিধানিক ‘সাংসদ’ শব্দ ব্যবহার করে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে ভুল বার্তা দিচ্ছে। সংবিধান মান্য করা প্রথম আলোর সাংবিধানিক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনে তারা ব্যর্থ হয়েছে।
এসব বিষয় উল্লেখ করে ‘সাংসদ’ শব্দ ব্যবহার না করে ‘সংসদ সদস্য’ শব্দ ব্যবহারের জন্য প্রথম আলোকে অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রকাশককে অসাংবিধানিক শব্দের ব্যবহারের জন্য জাতির কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়াও পাঠকদের উদ্দেশ্যে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া প্রথম আলো যাতে অসাংবিধানিক শব্দ ‘সাংসদ’ ব্যবহার না করে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অপর বিবাদীদের অনুরোধ করা হয়েছে। নোটিশ পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে।