সাতক্ষীরা জেলা আ.লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ আর নেই

সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আহমেদ ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ডিসেম্বর থেকে ঢাকার বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সেখানে তাঁর করোনা নেগেটিভ হলেও পরপর দুইবার স্টোক করেন এবং নানা শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হন। গতকাল সোমবার রাত ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে সাতক্ষীরা জেলার সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আজ মঙ্গলবার বাদ জোহর সাতক্ষীরা শহীন আব্দুর রাজ্জাক পার্কে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আফম রুহুল হক, সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দর, সাবেক সংসদ সদস্য এ কে ফজলুল হক, সাবেক সংসদ সদস্য বি এম নজরুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মোখলেসুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান, জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল, পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, ৮ দলীয় নেতারা, সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতারা, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবং সুশীল সমাজের সব স্তরের মানুষ।
এদিকে, জানাজা চলাকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ভারতে অবস্থানরত তোফায়েল আহমেদ টেলিফোনে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।
কালিগঞ্জের নলতায় খানবাহাদুর আহছানিয়া মিশনে দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে তাঁর তাঁর পারিবারিক কবরস্থান দেবহাটার পারুলিয়ায় দাফন করা হয়। এর আগে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। জানাজায় ইমামতি করেন মাওলানা সাইফুল ইসলাম।
সাবেক পূর্ব পাকিস্তান আমল থেকে ছাত্রলীগের সাধারণ কর্মী হিসেবে রাজনীতিতে হাতেখড়ি তাঁর। এ সময় থেকে সব রাজনৈতিক আন্দোলন এবং বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফার পক্ষে আন্দোলন করে রাজনীতির প্রথম সারিতে আসেন তিনি। এরপর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাবিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। এরপর ১৯৬৯-এর গণআন্দোলনে সংগ্রামী ভূমিকা রাখেন তিনি। ১৯৭১ সালে মুনসুর আহমেদ মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ৯ নম্বর সেক্টরে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে থেকে বীর সৈনিকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ১৯৭২ সালে মুনসুর আহমেদকে দেবহাটার পারুলিয়ায় রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত করে সরকার। এরপর ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন তিনি। পরপর তিনবার একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হওয়া মুনসুর আহমেদকে ১৯৭৫ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক করে তৎকালীন সরকার। তিনি টানা ২২ মাস কারাবন্দি থাকা অবস্থায় নির্বাচন করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
১৯৮০ সালে মুনসুর আহমেদ মহকুমা আওয়ামী লীগের প্রাণপুরুষ সৈয়দ কামাল বখত সাকীর সাহচর্যে তাঁর প্যানেলভুক্ত হয়ে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৪ সালে সাতক্ষীরা জেলা ঘোষিত হওয়ার পর থেকে সর্বশেষ ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৯ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মুনসুর আহমেদ।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মুনসুর আহমেদ ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরার দেবহাটা-কালিগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনেও একইভাবে তিনি একই আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ এর নির্বাচনে তিনি সামান্য ভোটে পরাজিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. রুহুল হকের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি শ্যামনগর ও আংশিক কালিগঞ্জ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। ২০১১ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আহমেদকে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে বহাল ছিলেন। এর আগে ২০১৫ সালে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। একইভাবে ২০২১ সালে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় দফার সভাপতি নির্বাচিত হন। সদ্য গঠিত এই কমিটির প্রথম মিটিংও তিনি করে যেতে পারেননি। তিনি টানা ৪০ বছর আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত থেকে দল ও আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়েছেন।