সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পেল শরীয়তপুরের চরবাসী

পদ্মার তলদেশ দিয়ে ৩০ কিলোমিটার সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে দুর্গম চরাঞ্চল নড়িয়া, জাজিরা, ভেদরগঞ্জ উপজেলার চারটি ইউনিয়নের মানুষ পেল বিদ্যুতের আলো।
গতকাল শনিবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে চরআত্রা আজিজিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে বাটন চেপে বাতি জ্বালিয়ে সাবস্টেশন উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই চরের নওপাড়া ও চরআত্রা ইউনিয়ন পড়েছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায়। কাঁচিকাটা ইউনিয়ন ভেদরগঞ্জ উপজেলা আর কুণ্ঠেরচর ইউনিয়ন জাজিরা উপজেলার অন্তর্গত। এ চারটি ইউনিয়নে প্রায় ৭২ হাজার মানুষের বসবাস।
গতকাল নড়িয়ার চরআত্রা ও নওপাড়ায় সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ উদ্বোধন করা হয়। নওপাড়া, চরআত্রা ও কাঁচিকাটা ইউনিয়নের পরিবারগুলো পাবে বিদ্যুৎ। তাই চারটি ইউনিয়নের প্রায় ৭২ হাজার মানুষ আনন্দে ভাসছে।
চরআত্রা ইউনিয়ন বাসিন্দা ডাক্তার তৌহীদ মুন্সী বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নটি পদ্মা নদীর মধ্যে হওয়ায় কল্পনা করতে পারিনি বিদ্যুৎ দেখতে পাব। আমার এলাকার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারকে অভিনন্দন জানাই।’
শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক জুলফিকার রহমান বলেন, ‘পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে শরীয়তপুরের চারটি চরে বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে। চর চারটি আমাদের এরিয়ায় পড়ছে। তবে এর কার্যক্রম চালাচ্ছে মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।’
আরইবির ঢাকা জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জয়নাল আবেদিন জানান, পদ্মার তলদেশ দিয়ে ৩০ কিলোমিটার সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে গত বছর বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শুরু করা হয়েছিল। প্রাথমিক প্রকল্প ব্যয় ৯৫ কোটি টাকা ধরে কাজ শুরু করা হয়েছে। এ সাবস্টেশনের মাধ্যমে শরীয়তপুরের পদ্মার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের ২০ হাজারের বেশি পরিবার বিদ্যুৎ সুবিধা পাবে। উদ্বোধনের পরে এক হাজার গ্রাহককে সংযোগ দেওয়া হবে।
উদ্বোধনের পর প্রধান অতিথির বক্তব্যে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী (মুজিববর্ষে) বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালাবেন। তারই অংশ হিসেবে আজ নওয়াপাড়ায় উদ্বোধন করা হলো পদ্মার তলদেশ দিয়ে ৩০ কিলোমিটার সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ১০এমভিএ এ সাব-স্টেশনটি।’
মন্ত্রী আরো বলেন, “‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’—এ স্লোগান এখন আর স্লোগানে সীমাবদ্ধ নয়, এটি এখন সূর্যালোকের মতো সত্য। আমরা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী বলেই শরীয়তপুরের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন তিন থেকে চার ঘণ্টার নৌ-দূরত্বের দ্বীপাঞ্চল নড়িয়া, জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার চারটি ইউনিয়নে আজ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হলো। দুর্গম এ চরাঞ্চলের মানুষ প্রায় ৭০ বছর ধরে বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে ৭০ বছরেরও অধিক সময়ের লালনকৃত স্বপ্ন পূরণ হলো চরবাসীর। আর এরই মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষ প্রবেশ করল আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ভুবনে।’
জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহেরের সভাপতিত্বে সুধী সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আরইবি ঢাকা জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জয়নাল আবেদিন, শরীয়তপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেদুর রহমান খোকা সিকদার, পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে, নড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম ইসমাইল হক, শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক জুলফিকার রহমান, মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক মো. মোবারক উল্লাহ প্রমুখ।
এ ছাড়া জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।