সাড়ে ৪ মাসেই কোরআনে হাফেজ ৯ বছরের আউয়াল
মাত্র সাড়ে চার মাসে পবিত্র কোরআন মুখস্থ করার (হাফেজ) মেধা দেখিয়েছেন নয় বছরের শিশু আব্দুল আউয়াল। পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষাতেও সে সব বিষয়ে শতভাগ নম্বর পাওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছে।
চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ভাণ্ডারি মহলের জামালুল কোরআন হাফিজিয়া মাদরাসার ছাত্র আবদুল আউয়াল এ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলছে বলে বার্তা সংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
মেধাবী শিশু আব্দুল আউয়াল ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৮ নম্বর পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের দক্ষিণ কড়ৈতলী গ্রামের মৌলভীবাড়ির মো. মোশারফ হোসেন (মোশারফ মাস্টার নামে পরিচিত) ও মাজেদা আক্তারের ছেলে। দুই সন্তানের মধ্যে আব্দুল আউয়াল বড়। বাবা বর্তমানে ৫৮ নম্বর পশ্চিম ভাওয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এই বিদ্যালয়েই বর্তমানে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল আউয়াল।
জামালুল কোরআন হাফিজিয়া মাদরাসার প্রধান শিক্ষক ও পরিচালক হাফেজ মাওলানা ইবনে আহমদ ওয়ালী উল্লাহ জানান, আব্দুল আউয়াল তাঁর মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার পর এক বছরের মধ্যেই নূরানী ও নাজেরা শেষ করে। পরে ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট হিফ্জ বিভাগে ক্লাস শুরু করে। সফলভাবে শেষ করে অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ কোরআনে হাফেজ হয় চলতি বছর ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি। মাঝে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্যে সে ১৫ দিনের ছুটি নিয়েছিল। এ হিসাবে সাড়ে চার মাসেই সে পবিত্র কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।
মাওলানা ইবনে আহমদ ওয়ালী উল্লাহ আরো বলেন, আব্দুল আউয়াল প্রথম দিকে প্রতিদিন তিন পৃষ্ঠা করে পড়া দিত। শেষদিকে এসে দিনে ছয় থেকে সাত পৃষ্ঠা করে পড়া দিতে পারত। সে এমনিতে সারাদিন খুব একটা পড়াশোনা করত না। অল্পতেই তার পড়া মুখস্থ হয়ে যায়। তার মেধা দেখে পড়ালেখায় আরো আগ্রহী করে তোলার জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করি। এতে সে আনন্দের সঙ্গেই পড়ালেখা করেছে। আবার অমনোযোগী হলে পুরস্কারের সঙ্গে সঙ্গে জরিমানা দিতে হবে এ কথা তাকে স্মরণ করিয়ে দিলে সে পথে আর পা বাড়াত না।
শিক্ষক বলেন, ‘নয় বছর বয়সে আব্দুল আউয়াল আমাদের মাদরাসার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অহংকারে পরিণত হয়েছে। মাদরাসায় নিয়মিত পড়ার বাইরে যে সময় অবশিষ্ট থাকত সে সময় তাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বইসমূহ পড়ার জন্য সহায়তা করেছি। ফলে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলেও তার পড়ালেখার বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। তাছাড়া আব্দুল আউয়াল তার প্রতিভার মাধ্যমে একই সঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করে সফলতার স্বাক্ষর রাখতে সমর্থ হয়। আমরা সবাই তার উজ্জল ভবিষ্যৎ কামনা করি।’
গর্বিত এ সন্তানের পিতা মো. মোশারফ হোসেন জানান, ২০১০ সালের ২ নভেম্বর আব্দুল আউয়ালের জন্ম। শিশু বয়স থেকেই তার মেধার পরিচয় তিনি পেয়েছেন। তাই তার প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়ার জন্য নিজের বিদ্যালয়ে ভর্তি করান। তিনি জানান, আব্দুল আউয়াল সারাদিন দুষ্টুমি করত। পড়াশোনায় থাকত অল্প কিছুক্ষণ। আর তাতেই সে তার স্কুলের পড়া শেষ করতে সমর্থ হত।
এদিকে দাদির আশা ও স্বপ্ন নাতির আলেম হওয়া। এজন্য চাচা মুফতি মুনাওয়ার হোসেনের আগ্রহে তাকে প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে মাদরাসার হিফ্জ বিভাগে পড়ানোর জন্য শিক্ষক বাবা উদ্বুদ্ধ হন।
প্রথমে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের পেছনে একটি মাদরাসায় ভর্তি করালেও একমাস পর ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরস্থ জামালুল কোরআন হাফিজিয়া মাদরাসায় আবদুল আউয়ালকে তিনি ভর্তি করান। মাদরাসার নূরানী ও নাজেরা শাখায় ভর্তি হলেও মাদরাসার প্রধান শিক্ষকের আগ্রহ ও তার মেধা দেখে প্রাথমিক বিদ্যালয়েও তার পড়াশোনা অব্যাহত রাখেন তিনি। ফলে একসঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠানে দুটি ধারায় সে অধ্যয়ন করেছে এবং সফল হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণিতে সমাপনী পরীক্ষায় সব বিষয়ে শতভাগ নম্বর পেলেও বিদ্যালয়ে মাঝে মধ্যে অনুপস্থিতির কারণে তাকে ক্লাসে রোল নম্বর দুই প্রদান করে কর্তৃপক্ষ। একই নম্বর পাওয়া অপর একজনকে প্রথম করা হয়।
ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মোশারফ হোসেন আরো বলেন, ‘আলেম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে যদি আল্লাহর ইচ্ছায় সাধারণ শিক্ষা নিয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা যে কোনো পেশায় যেতে আগ্রহী হয় তবে আমি সেই চেষ্টা করব।’