সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন শুরু
আইনজীবীদের অন্যতম সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২১-২২ সেশনের দুদিনব্যাপী নির্বাচন শুরু হয়েছে। আজ বুধবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। বৃহস্পতিবারও একইভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মাঝে দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণে বিরতি থাকবে। বৃহস্পতিবার রাতেই ভোটগণনা করা হবে।
আজ বুধবার সকাল থেকে নির্বাচন উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ব্যাপক উৎসাহ- উদ্দীপনা বিরাজ করছে। সাদা, লাল, নীল ও ‘বিদ্রোহী নীল’ প্যানেল মিলে চার প্যানেলের প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের লড়াই হবে।
জানা গেছে, নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মূলত সরকারদলীয় আইনজীবীদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সাদা প্যানেল এবং বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত নীল প্যানেলের মধ্যে। যদিও এর বাইরে এবারই প্রথম প্রগতিশীল আইনজীবীদের জাতীয় আইনজীবী জোট লাল (রেড) প্যানেল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে।
এর বাইরে বিএনপি-জামায়াতপন্থি হিসেবে পরিচিত বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা আবার অন্য একটি প্যানেলের ব্যানারে ভোট করছেন। একে বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা ‘বিদ্রোহী নীল’ প্যানেল বলে আখ্যা দিয়েছেন। সে হিসেবে এবার দেশের সুপ্রিম কোর্ট বারে চার প্যানেলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই চার প্যানেলের বাইরে একজন নিরপেক্ষ সভাপতি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এবারের নির্বাচনে সুপ্রিম কোর্টের সাত হাজার ৭১৯ জন আইনজীবী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে দুপুরে এক ঘণ্টার বিরতি দিয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের এই সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪টি পদের বিপরীতে এবারের নির্বাচনে মোট প্রার্থী হয়েছেন ৫১ জন।
এবারের নির্বাচনে সরকারসমর্থক আইনজীবীদের সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা প্যানেল) সভাপতি পদে সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু ও সম্পাদক পদে আব্দুল আলীম মিয়া জুয়েলের নেতৃত্বে একক প্যানেল দিয়েছে।
মূল বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল (নীল প্যানেল) থেকে সভাপতি পদে মো. ফজলুর রহমান ও সম্পাদক পদে বর্তমান সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল নির্বাচন করছেন।
অপরদিকে বিএনপিপন্থিদের ‘নীল বিদ্রোহী’ প্যানেল থেকে সভাপতি পদে সমিতির সাবেক সহসভাপতি এ বি এম ওয়ালিউর রহমান খান ও সম্পাদক পদে মির্জা আল মাহমুদ প্রার্থী হয়েছেন।
বিএনপি বিদ্রোহী প্যানেল দিলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মতিন খসরু-জুয়েল প্যানেল ও ফজলুর রহমান-কাজল প্যানেলের মধ্যে। বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বিরোধের প্রভাব নির্বাচনে পড়তে পারে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।
এর বাইরেও প্রগতিশীল আইনজীবীদের পক্ষ থেকে লাল প্যানেল নামে একটি প্যানেল দেওয়া হয়েছে। তবে এই প্যানেল ১৪টি পদে প্রার্থী দিতে পারেনি। এ প্যানেলের সভাপতি পদে কে এম জাবির ও সম্পাদক পদে মো. গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী প্রার্থী হয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এই নির্বাচন পরিচালনার জন্য যে সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে তাঁর আহ্বায়ক হয়েছেন সাবেক বিচারপতি এ এফ এম আবদুর রহমান। যিনি প্রার্থী ও ভোটারদের নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে চলতে আহ্বান জানিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণের বুথ তৈরিসহ সার্বিক প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।
আওয়ামীপন্থি সাদা প্যানেলের প্রার্থী
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু এই প্যানেল থেকে সভাপতি পদে এবং অ্যাডভোকেট আবদুল আলীম মিয়া জুয়েল সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন। এই প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা হলেন সহসভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিক উল্ল্যা ও অ্যাডভোকেট মো. আলী আজম, কোষাধ্যক্ষ পদে ড. মো. ইকবাল করিম, সহসম্পাদক পদে ব্যারিস্টার সাফায়েত সুলতানা রুমি ও অ্যাডভোকেট নুরে আলম উজ্জ্বল, সদস্য পদে অ্যাডভোকেট মিন্টু কুমার মণ্ডল, ব্যারিস্টার মুনতাসীর উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার মো. সানোয়ার হোসেন, অ্যাডভোকেট এ বি এম শিবলী সালেকীন, অ্যাডভোকেট মো. সিরাজুল হক, অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান রোমান।
বিএনপিপন্থি নীল প্যানেলের প্রার্থী
বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমানকে সভাপতি পদে এবং সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া দুটি সহসভাপতি পদে জয়নাল আবেদিন তুহিন ও জালাল আহমেদ, দুটি সহসম্পাদক পদে মাহমুদ হাসান ও রাশিদা আলম ঐশী, কোষাধ্যক্ষ পদে আব্দুল্লাহ আল মাহবুব এবং সাতটি সদস্য পদে মনজুরুল আলম সুজন, শফিকুল ইসলাম শফিক, গোলাম মোহাম্মদ জাকির, পারভীন কাওসার মুন্নি, রেদওয়ান আহমেদ রানজিব, নিয়াজ মুহাম্মদ মাহবুব ও ইফতেখার আহমেদ প্রার্থী হয়েছেন।
‘বিদ্রোহী নীল’ প্যানেলের প্রার্থী
এই প্যানেলে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট ওয়ালিউর রহমান খান এবং সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মির্জা আল মাহমুদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া সহসভাপতি অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা ও অ্যাডভোকেট সাবিনা ইয়াসমিন লিপি, কোষাধ্যক্ষ পদে অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান সম্রাট, সহসম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট জুলফিকার আলী জুনু ও অ্যাডভোকেট মো. সুলতান মাহমুদ, সদস্য পদে অ্যাডভোকেট শাফিউর রহমান শাফি, মো. মুনির হোসেন, অ্যাডভোকেট এ কে এম মুক্তার হোসেন, অ্যাডভোকেট মহিত উদ্দিন জুবায়ের, আকবর হোসেন, ওয়ালিউর রহমান শুভ ও নাজমুল হাসান প্রার্থী হয়েছেন।
লাল প্যানেলের প্রার্থী
এই প্যানেল থেকে সভাপতি পদে কে এম জাবির, সম্পাদক পদে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, সহসভাপতি পদে নজরুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ পদে মো. বদিউজ্জামান তপাদার, সহসম্পাদক পদে মো. সাজ্জাদ হোসেন, সদস্য পদে শহিদুল হক, এস কে এম আনিসুর রহমান খান, জহিরুল আলম বাবর প্রার্থী হয়েছেন।
এ ছাড়া দলের বাইরে থেকে এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অ্যাডভোকেট মো. ইউনুস আলী আকন্দ।