সেনা সদস্যের আত্মহত্যার রহস্য উদঘাটন, দুই শিক্ষক গ্রেপ্তার
রাজশাহী নগরীতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্টের আত্মহত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে মৃত সেনা সদস্যের খোয়া যাওয়া মোবাইল জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রের সক্রিয় সদস্য বলে দাবি করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন নওগাঁর মান্দা থানার বালিচ গ্রামের মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী আইরিন ইয়াসমিন লিজা (৩৪) ও ঢাকার সাভার থানার ডেন্ডাবর নতুনপাড়া পলাশবাড়ী গ্রামের ফিরোজের মেয়ে শামীমা আক্তার (২৪)।
গতকাল রোববার দুপুরে মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, ‘সেনা সদস্য মজিবুর রহমানকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার নওগাঁর আইরিন ইয়াসমিন লিজা ও ঢাকার শামীমা আক্তারকে (২৪) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নিহত মজিবুর রহমান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট ছিলেন। তিনি নগরীর উপশহর এলাকার একটি ভাড়া বাসায় সপরিবারে বসবাস করতেন। গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টা থেকে পরের দিনে সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে যেকোনো সময় মজিবুর আত্মহত্যা করেন। ওই দিন মজিবুর রহমানের পরিবারের অন্য সদস্যরা বাসায় ছিলেন না।
খবর পেয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ বাসার দরজা ভেঙে লাশ উদ্ধার করে। নিহতের বড় ছেলে তার বাবার আত্মহত্যার ঘটনায় বোয়ালিয়া মডেল থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, মৃত্যুর পর তার বাবার মোবাইল ফোনসেটটি পাওয়া যায়নি। এছাড়া বাসায় থাকা চার লাখ টাকা ও ব্যাংকের কিছু কাগজপত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি।
নিহতের পরিবারের সদস্যদের এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে। তদন্তে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়া দুই নারীকে শনাক্ত করে পুলিশ। এরপর গত ২৬ সেপ্টেম্বর বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় অভিযান পরিচালনা করে। তারা সাভার থেকে প্রথমে আইরিন ইয়াসমিন লিজাকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তার ব্যক্তিগত মোবাইল ও তার কাছ থেকে মৃত মজিবুর রহমানের খোয়া যাওয়া মোবাইলও জব্দ করা হয়। এরপর বোয়ালিয়া থানার ওই টিম শামীমা আক্তারকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ তারও ব্যক্তিগত মোবাইল জব্দ করে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেপ্তার আইরিন পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মৃত মজিবুর রহমানের সঙ্গে তার কথাবার্তা ও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল বলে দাবি করেছেন। ঘটনার দিন লিজা ও শামীমা মৃত মজিবুর রহমানের বাসায় স্বেচ্ছায় এসে তার পাশের রুমে অবস্থান করছিলেন। লিজাকে মৃত মজিবুর ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ দিয়ে তার রুমে ডাকেন। তিনি যেতে না চাইলে মজিবুর আত্মহত্যা করবে বলে ম্যাসেঞ্জারে জানান। এরপরও লিজা তার কাছে না গেলে মজিবুর রাতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরের দিন সকালে মজিবুরকে আত্মহত্যা করতে দেখে তার মোবাইল ফোনসেট, চাবি ও নগদ টাকা নিয়ে লিজা ও শামীমা পালিয়ে যান বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।
পুলিশ কমিশনার জানান, মজিবুর রহমান রাজশাহী মহানগরীতে জমির প্লট ক্রয়-বিক্রয় এবং রেন্ট-এ-কারের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গ্রেপ্তার দুই নারী সাভারের একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষিক। তারা শিক্ষকতার অন্তরালে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রের সক্রিয় সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানায় নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।