স্বাস্থ্যবিধি মেনে বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজ
করোনাভাইরাসের কারণে দুই সপ্তাহ পর সরকারি নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিরা জুমার নামাজ আদায় করেছেন। রমজানের এই জুমায় জাতীয় এ মসজিদে মুসল্লিরা নামাজ আদায়ের জন্য ভিড় করেছিলেন। এর আগেই জুমার নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের জন্য গেটে বসানো হয় জীবাণুনাশক অটোমেটিক স্প্রে মেশিন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুপুরে মসজিদটির প্রবেশপথে সাবান ও স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সেইসঙ্গে সবাই মাস্ক পরছেন কি না, সেটা নিশ্চিত হয়েই মসজিদে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখেই নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। মসজিদের প্রবেশপথে শৃঙ্খলিতভাবে আনসার বাহিনী মুখে মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহারে মুসল্লিদের উৎসাহ দেন।
মহামারি করোনার সংক্রমণ রোধে জনসমাগম এড়াতে মসজিদে না এসে ঘরে নামাজ আদায় করার নির্দেশ দেয় সরকার। এর ফলে নির্দিষ্ট সংখ্যক মুসল্লি নিয়ে মসজিদে নামাজ হতো। মসজিদে জামায়াত চালু রাখার প্রয়োজনে খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেম মিলে পাঁচ ওয়াক্তের নামাজে অনধিক পাঁচজন এবং জুমার জামায়াতে অনধিক ১০ জন শরিক হতে পারতেন। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে এই বিধিনিষেধ তুলে নেয় সরকার। এরপর এটাই প্রথম জুমা।
১৯৬৮ সালে মসজিদটি নির্মাণের পর অনেক রাজনৈতিক উত্থান-পতন, আন্দোলনের সাক্ষী বায়তুল মোকাররম মসজিদ। অনেক আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়েছে সেখানে। কিন্তু কোনোসময়ই নামাজের জামায়াতে মুসল্লিহীন ছিল না। ভয়াবহ করোনাভাইরাসের কারণে জামাত করে মসজিদে নামাজ নিষিদ্ধ করা হয়। এ জন্য জাতীয় মসজিদের গেটগুলো তালাবদ্ধ ছিল। ভেতরে স্বল্পসংখ্যক মুসল্লি নিয়ে তখন জুমার নামাজ শেষ করা হয়। সে সময় কেউ কেউ সামাজিক দূরত্বে থেকে সেখানকার ফুটপাতে নামাজ পড়েন।
তবে শর্তসাপেক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে দেশের সব মসজিদ খুলে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে বুধবার জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার জোহরের নামাজ থেকে দেশের মসজিদগুলো খুলে দেওয়া হবে। তবে মসজিদে জামাতের ক্ষেত্রে শর্ত দুজন মুসল্লির মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এ ছাড়া দুই কাতারের পর এক কাতারের জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে। শর্তসাপেক্ষে পাঁচজন ইতেকাফের জন্য ‘মসজিদে অবস্থান করতে পারবে।
শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে :
১. মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর পুরো মসজিদ জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে।
২. মসজিদে প্রবেশের আগে স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার সাবান রাখতে হবে। এবং মুসল্লিদের অবশ্যই মাস্ক পরে আসতে হবে।
৩. অজু বাসা থেকে করে আসতে হবে; সুন্নাত নামাজ ঘরে আদায় করে মসজিদে আসতে হবে এবং অজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
৪. কাতারে নামাজে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব, অর্থাৎ তিন ফুট পর পর দাঁড়াতে হবে।
৫. এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে।
৬. শিশু, বয়োবৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তি জামাতে নামাজ আদায় করতে পারবে না।
৭. সংক্রমণ রোধ নিশ্চিত করে মসজিদের অজুখানায় সাবান/হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না।
৮. সর্বসাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিত করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।
৯. মসজিদে ইফতার ও সেহরির আয়োজন করা যাবে না।
এসব শর্ত পালন করে মসজিদে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে সর্বোচ্চ পাঁচজন ইতেকাফের জন্য অবস্থান করতে পারবেন।
নামাজ শেষে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করার জন্য খতিব, ইমামদের অনুরোধ করা হয়েছে। মসজিদের খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মসজিদ পরিচালনা কমিটি এ বিষয়গুলো বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেবে।
এসব শর্ত লঙ্ঘিত হলে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশন বিষয়টি তদারক করবে।