হাকালুকিতে পাখিশুমারি, কমার দাবি
এক বছরের ব্যবধানে দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে পাখির সংখ্যা কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে দাবি করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, হাওর ও বিল শুকিয়ে মাছ ধরা, অবাধে পাখি শিকার ও পাখির নিরাপদ বাসস্থান গড়ে না ওঠা।
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ উপজেলার বিরাট অংশ নিয়ে দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি। প্রায় ১৮ হাজার ১১৫ হেক্টর আয়তনের এই হাওরে রয়েছে ২৩৮টি বিল। চলতি বছরের ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি হাকালুকির ৪৬টি বিলে অনুষ্ঠিত হয় পাখিশুমারি। এই শুমারিতে ৪৬ প্রজাতির ২৪ হাজার ৫৫১টি জলচর পাখির দেখা মিলেছে।
বন বিভাগের সহযোগিতায় ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন (আইইউসিএন), প্রকৃতি ও জীবন এবং বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব হাকালুকি হাওরের ৪৬টি বিলে এ বছর শুমারি করে।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক, বার্ড ক্লাবের সহসভাপতি তারেক অণু, আইইউসিএনের মুখ্য গবেষক সীমান্ত দিপু ও আইইউসিএন বাংলাদেশের অন্য গবেষকরা পাখিশুমারিতে অংশ নেয়।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সহসভাপতি তারেক অণু জানান, হাকালুকি হাওরে ফুয়ালা, পলোভাঙা, হাওড় খাল, কইর-কণা, মোয়াইজুড়ি, জল্লা, কুকুরডুবি, বালিজুড়ি, বালিকুড়ি, মাইছলা, গড়শিকোণা, চোলা, পদ্মা, কালাপানি, রঞ্চি, দুধাই, গড়কুড়ি, চোকিয়া, উজান-তরুল, ফুট, হিংগাউজুড়ি, নাগাঁও, লরিবাঈ, তল্লার বিল, কাংলি, কুড়ি, চেনাউড়া, পিংলা, পরোটি, আগদের বিল, চেতলা, নামা-তরুল, নাগাঁও-ধুলিয়া, মাইছলা-ডাক, চন্দর, মালাম, কাটুয়া, তেকোণা, গজুয়া, হারামডিঙা, গোয়ালজুড়, মেদা, বায়াসহ ৪৬টি বিলে পাখিশুমারি চলে।
পাখি কমে যাওয়ার একাধিক কারণ উল্লেখ করেছেন শুমারি সংশ্লিষ্টরা। অবাধে পাখি শিকার ও পাখির নিরাপদ বাসস্থান গড়ে না ওঠা এমন অবস্থার জন্য অন্যতম কারণ বলে জানান তাঁরা।
শুমারি সংশ্লিষ্টরা জানান, স্থানীয়দের সচেতন হয়ে পাখি শিকার বন্ধ এবং তাদের আবাসের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাখি কমে গেলে মাছও কমে যাবে। যে হাওর বা বিলে পাখি থাকে না, প্রাকৃতিক নিয়মে সেখানে মাছ হবে না।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের তথ্য অনুসারে, ২০১৭ সালে হাকালুকি হাওরে পাখির সংখ্যা ছিল ৫৮ হাজার ২৮১। ২০১৮ সালে তা কমে এসে দাঁড়ায় ৪৫ হাজার ১০০তে। ২০১৯ সালে এর সংখ্যা ছিল ৩৭ হাজার ৯৩১। ২০২০ সালের শুমারিতে হাওরে ৫৩ প্রজাতির ৪০ হাজার ১২৬টি পাখির দেখা মেলে। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত শুমারিতে ৪৬ প্রজাতির ২৪ হাজার ৫৫১টি জলচর পাখির দেখা পাওয়া যায়।