পাগলা মসজিদের দানবাক্সে রেকর্ড ৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সগুলো খুলে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ পাওয়া গেছে। আজ শনিবার (১২ এপ্রিল) দিনভর গণনা শেষে মসজিদের ১১টি দানবাক্স থেকে মোট ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা পাওয়া যায়।
জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান এই বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, প্রাপ্ত সমুদয় টাকা দ্রুত ব্যাংকে জমা করা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ৩০ নভেম্বর মসজিদের ১০টি দানবাক্স থেকে সর্বোচ্চ ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। তবে এবারের অর্থের পরিমাণ আগের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।
আজ সকালে গণনা শুরুর আগে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের জানান, পাগলা মসজিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ইতোমধ্যেই দান থেকে প্রাপ্ত ৮০ কোটি ৭৫ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭৬ টাকা জমা রয়েছে।
সকাল ৯টার দিকে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীর উপস্থিতিতে ৪ মাস ১১ দিন পর দানবাক্সগুলো খোলা হয়। ১১টি দানবাক্স খুলে ২৮ বস্তা টাকা পাওয়া যায়। নগদ টাকার পাশাপাশি দানের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রা ও সোনা-রূপার গয়নাও পাওয়া গেছে, যা পরবর্তীতে গণনা করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

এই বিপুল পরিমাণ টাকা গণনার জন্য সর্বোচ্চ সংখ্যক লোকবল নিয়োগ করা হয়েছিল। মোট ৪৯৪ জনের একটি বিশাল দল এই কাজে নিয়োজিত ছিলেন। পাগলা মসজিদ, মাদরাসা, আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার ২৮৬ জন ছাত্র এবং রূপালী ব্যাংকের ৮০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ৩৬৬ জন টাকা ভাঁজ করা ও গণনার কাজ করেন। এছাড়া সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও আনসারের ৭৫ জন সদস্য এবং মসজিদ-মাদ্রাসার ৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের সহায়তা করেন। ১৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এই টাকা গণনা কার্যক্রম তদারকি করেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে গণনা শেষ হয়।
জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান জানান, প্রাপ্ত দানের টাকা পাগলা মসজিদ এবং এর অন্তর্ভুক্ত মাদ্রাসা, এতিমখানা ও গোরস্থানের ব্যয় নির্বাহের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা ও গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থিক সহায়তায় ব্যবহৃত হয়।
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পশ্চিম প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় চার একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত সুউচ্চ মিনার ও তিন গম্বুজ বিশিষ্ট পাগলা মসজিদ একটি ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থাপনা। জনশ্রুতি অনুসারে, প্রায় পাঁচশত বছর পূর্বে ঈশা খাঁর আমলে দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিল কদর পাগলা নামের এক ব্যক্তি নদীর তীরে নামাজ পড়তেন। পরবর্তীতে সেই স্থানে মসজিদটি নির্মিত হলে তার নামানুসারেই এটি ‘পাগলা মসজিদ’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।