৭ মার্চের ভাষণের স্বত্ব ফিরিয়ে আনলেন ব্যারিস্টার ওলোরা আফরিন
ইউনেসকোর স্বীকৃতি পাওয়া ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি অনুপ্রেরণার বিষয়। কিন্তু, ২০১২ সাল থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের এ ভাষণকে ভারতীয় একটি কোম্পানি নিজেদের মতো অপব্যবহার করছে। এ ছাড়া এ ভাষণের স্বত্বাধিকারী মালিক হিসেবেও ওই কোম্পানি নিজেদের নামে ডিজিটাল লাইসেন্স করে নিয়েছিল, যা বাংলাদেশের কোনো মন্ত্রণালয়ের জানা ছিল না। কিন্তু দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে এগিয়ে এলেন কপিরাইট বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার ওলোরা আফরিন। তিনি অ্যাক্রেডিটেড মিডিয়েটর মেধাস্বত্ব পরামর্শক সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল ও লাইসেন্সিং অ্যান্ড কালেকটিং সোসাইটি ফর সিনেমাটোগ্রাফ ফিল্মের (এলসিএসসিএফ) প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। এ ছাড়া উইমেন ইন আইপি বাংলাদেশের দায়িত্ব পালন করছেন। মামলা করে ওলোরা আফরিন ভারতীয় ওই কোম্পানির কাছ থেকে বাংলাদেশের সম্পদ ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে অপব্যবহার থেকে রক্ষা করেন। এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। নিচে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো :
এনটিভি অনলাইন : বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে অপব্যবহার থেকে কীভাবে রক্ষা করলেন?
ব্যারিস্টার ওলোরা আফরিন : আমরা ২০১৮ সালে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে কপিরাইট সমিতি হিসেবে নিবন্ধিত হই। এরপর আমাদের প্রধান কাজ ছিল, আমরা বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প ও অডিও-ভিজ্যুয়াল কাজ নিয়ে প্রতিবছর প্রতিবেদন উপস্থাপন করা। আমি যখন দায়িত্ব পাই, তখন স্বাভাবিকভাবে বাঙালি হিসেবে প্রথমে ৭ মার্চের ভাষণের কথা ভাবনায় আসে। তখন দেখলাম, বিভিন্ন পন্থায় বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণকে ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন—আওয়ামী লীগের ইউটিউব চ্যানেল, ইয়াংবাংলা ইউটিউব চ্যানেল, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওটি আপলোডেড রয়েছে।
কিন্তু আমরা এরপর দেখতে পাই এটির মালিকানা কোথায় আছে। সেটি খোঁজ করতে গিয়ে দেখি—ইনরেকো এন্টারটেইনমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড নামের ভারতীয় কোম্পানি ২০১২ সাল থেকে এ ভাষণটি বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করছে। তারা এটিকে অন্য নাম দিয়ে ডিজিটাল লাইসেন্সসহ ব্যবহার করে আসছে। অথচ, যখন আমরা এটি প্লে করি, তখন দেখি ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্লে হচ্ছে। তারা যে শিরোনাম দিয়ে চালাচ্ছে তা হলো ‘রক্তের প্রতিশোধ রক্ত নিব’ এবং ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে’। অথচ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণটি—যার স্রষ্টা জাতির পিতা নিজে মূল মেধাস্বত্বের স্বত্বাধিকারী।
যদিও ইউনেসকোর ফর্ম অনুযায়ী, বাংলাদেশের চারটি জায়গায় ঐতিহাসিক ভাষণটির সম্পূর্ণ মালিকানা রয়েছে। সেগুলো হলো—আইসিটি মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ ও বাংলাদেশ বেতার। কিন্তু কপিরাইটের মালিকানার বিষয়ে কিছু বলা না থাকায় বিভিন্ন কোম্পানি প্রত্যেক বাঙালির অহংকার এ ভাষণটির অপব্যবহার করছে, যা ডিজিটাল কপিরাইট আইন ৭৮-এর নৈতিক অধিকার লঙ্ঘন এবং জাতির পিতাকে অসম্মান করার শামিল। বিষয়টি আমি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে চিঠি পাঠাই। এবং পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিবের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করি। কিন্তু করোনাজনিত পরিস্থিতির কারণে আমরা কার্যক্রম শেষ করতে পারিনি।
এনটিভি অনলাইন : ভারতীয় কোম্পানিটি আর্থিকভাবে কতটা লাভবান হয়?
ব্যারিস্টার ওলোরা আফরিন : প্রায় মিলিয়ন ডলার এবং আমাদের চেতনার অপব্যবহার।
এনটিভি অনলাইন : আপনারা কী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন?
ব্যারিস্টার ওলোরা আফরিন : সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমরা ইনরেকো এনটারটেইনমেন্ট লিমিটেডকে উকিল নোটিশ পাঠাই। নোটিশে বলা হয়—কপিরাইট আইনের ৭৮ ধারা অনুযায়ী, ব্যক্তির স্বত্ব ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই তাঁর নাম থাকতে হবে। কিন্তু ইনরেকো এনটারটেইনমেন্ট লিমিটেড জাতির পিতার এ ভাষণকে ভিন্ন নাম দিয়ে অপব্যবহার করা হচ্ছে। তাই ডিজিটাল লাইসেন্স অনুযায়ী তা বাতিল করতে হবে। এ নোটিশ পাঠানোর পর তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়। তারা ডিজিটাল লাইসেন্সটি অবমুক্ত করেছে। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে জাতির পিতার ঐতিহাসিক ভাষণটির অপব্যবহার রক্ষা করতে পেরে আমি অনেক গর্বিত এবং নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। আমি খুবই আনন্দিত।
এনটিভি অনলাইন : এখন ভাষণটির মালিকানা কার হবে?
ব্যারিস্টার ওলোরা আফরীন : কপিরাইট আইন অনুযায়ী ভাষণটির মালিকানা বঙ্গবন্ধুর পরিবারের। যদিও ২৫ বছর পর এ ভাষণ পাবলিক ডোমেইন হয়ে যায়, তাই বিদেশি কোম্পানি এটি ব্যবহার করছিল। কিন্তু, কপিরাইটের ৭৮ ধারা অনুযায়ী, নৈতিক মেধাস্বত্ব হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এই স্বত্বের মালিক। তাঁরা চাইলে এখন বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণের অপব্যবহারের বিষয়ে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারেন। তাঁরা চাইলে কপিরাইট আইন অনুযায়ী আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব। তাঁরা এখন চাইলে এটি নিজেদের মতো ব্যবহার করতে পারেন।
এনটিভি অনলাইন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ব্যারিস্টার ওলোরা আফরিন : আপনাকেও ধন্যবাদ।