প্রতিবাদ-বাধার মুখে যুদ্ধাপরাধী মান্নানের দাফন
প্রতিবাদ ও বাধার মুখে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার রাজাকার কমান্ডার গাজী আবদুল মান্নানের দাফন নিজ বাড়িতে সম্পন্ন হয়েছে।
আজ সোমবার দুপুর ২টার দিকে মান্নানের লাশ নারায়ণগঞ্জ থেকে করিমগঞ্জ পৌঁছার পর প্রথমে করিমগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও পরে করিমগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে পারিবারিকভাবে জানাজার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মোমিন আলী জানাজার ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত প্রতিবাদ জানান।
প্রতিবাদের মুখে করিমগঞ্জের ইউএনও আসমা আরা দুটি স্থানে জানাজা অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে করিমগঞ্জ থানার পুলিশ ও প্রতিষ্ঠান দুটির প্রধানকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
পরে ঘোনাপাড়া গ্রামে নিজ বাড়ির উঠানে জানাজা শেষে আবদুল মান্নানকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজা ও দাফনে পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়রা অংশ নেয়।
ইউএনও আসমা আরা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষের আবেগ-অনুভুতি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে দুটি স্থানে জানাজা অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।’
করিমগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মোমিন আলী বলেন, ‘শিক্ষাঙ্গনেরমতো পবিত্র স্থানে একজন কুখ্যাত রাজাকার গাজী মান্নানের জানাজা হতে পারে না।’
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গাজী আবদুল মান্নান (৮৯) মারা যান। নারায়ণগঞ্জ জেলার কাঁচপুর এলাকায় এক আত্মীয়র বাড়িতে ভোরে তিনি মারা যান বলে এনটিভি অনলাইনকে জানান করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা (ওসি) জাকির রাব্বানী।
গত বছরের ৩ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল করিমগঞ্জ উপজেলার চার চিহ্নিত রাজাকারের ফাঁসির দণ্ডাদেশ এবং একজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন।
ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত চার রাজাকার হচ্ছেন রাজাকার কমান্ডার গাজী আবদুল মান্নান, মধ্যপাড়া গ্রামের অ্যাডভোকেট এ টি এম শামসুদ্দিন আহমেদ, তাঁর ভাই সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন এ টি এম নাসির উদ্দিন আহমেদ এবং খুদির জঙ্গল গ্রামের হাফিজ উদ্দিন। এ ছাড়া আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত হচ্ছেন হাইদনখালি গ্রামের আজহারুল ইসলাম।
এঁদের মধ্যে শামসুদ্দিন আহমেদ কারাগারে আটক আছেন এবং বাকি চারজন পলাতক রয়েছেন। শামসুদ্দিন আহমেদ পালিয়ে থাকা অবস্থায় ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর পুলিশের হাতে আটক হন।
দণ্ডাদেশপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয় আদালতে।
এর মধ্যে রয়েছে, একাত্তরের ২৭ অক্টোবর করিমগঞ্জের আয়লা গ্রামে আটজনকে গুলি করে হত্যা, ২৩ আগস্ট উপজেলা ডাকবাংলোতে শান্তি কমিটির কার্যালয়ে এজনকে অপহরণ করে নির্যাতন ও হত্যা, ২৫ অগাস্ট পূর্ব নবাইদ কালিপুর গ্রামের এক নারীসহ দুজনকে অপহরণ করে নির্যাতন ও হত্যা, ৭ সেপ্টেম্বর রামনগর গ্রামে এক সংখ্যালঘুকে আটক করে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা, ১৫ সেপ্টেম্বর আতকাপাড়া গ্রামে ২০-২৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুদির জঙ্গলে একজনকে অপহরণ ও হত্যা এবং ১৩ নভেম্বর আয়লা গ্রামের একজনকে অপহরণ ও হত্যা।