‘দুষ্টু ছেলের’ চুল কেটে দিলেন শিক্ষক-মা
বরগুনার বেতাগী উপজেলার চান্দখালী ইসাহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক অতিষ্ঠ হয়ে স্কুলের মধ্যেই জোর করে ধরে ছেলের চুল কেটে দিয়েছেন। এ সময় স্কুলের শিক্ষার্থী ও ছেলের সহপাঠী আরো দুজনের চুল কেটে দেন তিনি।
আজ সোমবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনাও হচ্ছে।
তবে চান্দখালী ইসাহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সালমা শিরিন বলেন, ‘আমার ছেলে শাহরিয়ার নাজিম সিফাত ও তার দুই বন্ধুকে বেশ কয়েকদিন ধরেই চুল কাটার জন্য তাগাদা দেওয়া হচ্ছিল। এতে তারা কর্ণপাত করেনি। বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেছি।’
‘আমি একই সঙ্গে একজন অভিভাবক এবং শিক্ষক। আমার ছেলেসহ তিন শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে চুল না কাটায় অন্য শিক্ষার্থীরাও চুল কাটতে বেঁকে বসে। এতে স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্ন হয়।’
ওই শিক্ষক আরো বলেন, ‘পরে বাধ্য হয়ে আমি আমার ছেলে ও ছেলের দুই সহপাঠীকে লাইব্রেরিতে ডেকে এনে সেলুনে গিয়ে চুল কেটে আসার নির্দেশ দেই। এ সময় আমি কাঁচি দিয়ে আমার ছেলেসহ দুই শিক্ষার্থীর সামনের অংশের চুলের কিছুটা কেটে দেই, যাতে তারা সেলুনে গিয়ে চুল কেটে আসতে বাধ্য হয়।’
চান্দখালী ইসাহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বাবলুর রহমান বলেন, বারবার বলা সত্ত্বেও চুল না কাটায় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার নাজিম সিফাতের সামনের অংশের চুলের সামান্য অংশ কেটে দেয় তার মা শিক্ষক সালমা শিরিন। এ সময় তিনি ছেলের আরো দুই বন্ধুর চুলও কেটে দেন, যাতে তারা সেলুনে গিয়ে চুল কাটতে বাধ্য হয়। বিষয়টি একজন মা এবং তার ছেলের বিষয় ছিল। অথচ নানাভাবে বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করে বিভিন্ন অনলাইনে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক আরো বলেন, কিছু কিছু অনলাইনে যেসব শিক্ষার্থীদের চুল কাটা হয়নি তাদের নামও জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার নাজিম সিফাত জানান, ‘বারবার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও চুল না কাটায় মা আমার আর দুই বন্ধুর চুল কেটে দিয়েছে। আমাদের কোনো অভিযোগ নেই।’
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাব্বির ও মো. রায়হান জানায়, তাদের চুল কাটা হয়নি। তারপরও অনেক অনলাইনে তাদের চুল কাটা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
চান্দখালী ইসাহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাংগঠনিক কমান্ডার মো. বজলুর রশীদ দুলাল বলেন, স্থানীয় কতিপয় বখাটের পাল্লায় পড়ে কিছুটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার নাজিম সিফাত, হাসিবুর রহমান জয়, মেহেদী হাসান ও রাকিব। তাদের বারবার নির্দেশনা দেওয়া সত্ত্বেও তারা চুল কাটছিল না। পরে এই স্কুলেরই একজন শিক্ষক ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার নাজিম সিফাতের মা তাদের চুলের কিছু অংশ কেটে দেয়, যাতে তারা সেলুনে গিয়ে চুল কেটে আসতে বাধ্য হয়।
বেতাগীর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহজাহান আলী শেখ বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি না। এটা ঠিক না। তবে যদি হয়ে থাকে এটি তদন্ত করে দেখা হবে।’
বরগুনার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুকুমার চন্দ্র জানান, ‘শিক্ষার্থীদের মানসিক বা শারীরিক নির্যাতন করায় বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবু বিষয়টি কেন হয়েছে তা খতিয়ে দেখে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’