বিএনপিকে তুচ্ছ করে দেখার উপায় নেই : কাদের
ভোটের রাজনীতিতে বিএনপিকে তুচ্ছ করে দেখার কিছু নেই বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সংবিধান অনুযায়ী আগামী বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি।
আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে রাজশাহী নগরীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় কর্মী সমাবেশে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দল হিসেবে বিএনপি এখন যত এলোমেলো, নেতায় নেতায় সংশয়-সন্দেহ থাক না কেন, যত দুর্বল হোক, তাদের সমর্থন কিন্তু দুর্বল নয়। ভোটের রাজনীতিতে বিএনপিকে তুচ্ছ করে দেখার কোনো উপায় নেই। কাজেই যদি মনে করেন বিএনপির কী আছে এই অবস্থা তাদের। তাহলে আমার মনে হয় আত্মসন্তোষে আপনারা ভুগবেন না। আগামী ইলেকশনে তারা আসবে এবং প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তারাই হবে। খুব সহজ প্রতিদ্বন্দ্বী হবে এটাও মনে করার কোনো কারণ নেই। প্রতিপক্ষকে দুর্বল ভেবে আত্মন্তুষ্টিতে ভুগলে কী হবে? ৯১ সালের অবস্থা হবে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, ‘আগামী বছর ডিসেম্বরের মধ্যেই আমরা আশা করছি সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কাজেই সবাইকে অনুরোধ করব প্রস্তুত হয়ে যান, সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিন। আজকে আমরা ক্ষমতায় আছি, একসময় ক্ষমতায় নাও থাকতে পারি। ক্ষমতা চিরদিন থাকে না, সরকার চিরস্থায়ী নয়।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সবাইকে একসঙ্গে এডড্রেস (পরিচয়) করলাম। আমার এপিএস পারসেন্টেজ খায়, আমার নাম বিক্রি করে, আমি কি ভালো মানুষ? আমার আত্মীয়রা মাইনোরিটির বাড়ি দখল করে, আমি কি ভালো মানুষ? আমার আত্মীয়রা জোর করে, অবৈধভাবে অন্যের বাড়ি দখল করে, জমি দখল করে ভোগদখল করে, তাহলে কি আমি ভালো মানুষ?’
দলের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমি ভালো, আমার আত্মীয়রা অবৈধ ব্যবসা করে, আমি কি ভালো মানুষ? আমি অনেক ভালো মানুষের মুখোশ উন্মোচন করতে পারি। কাজে আমাদের এমপি সাহেব, মন্ত্রী সাহেব নিজে ভালো ভালো হলে চলবে না। আশপাশের লোক অপকর্ম করলে আপনি কেটে যাবেন, আপনি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সরকারের উন্নয়নে কোনো ঘাটতি নেই, ঘাটতি থাকলে নেতাদের আচরণে আছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব, আচরণটা শুদ্ধ করে নিতে হবে। নির্বাচনের বেশি দেরি নেই। এখন ক্ষমতায় আছেন, কেউ কিছু বলছে না। তবে আচরণ খারাপ করলে আগামী নির্বাচনে মানুষ ব্যালটে তার শাস্তি দিয়ে দেবে।’
জেলার নেতাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আপনারা কেউ পকেট কমিটি করবেন না। ত্যাগী নেতাদের দলে স্থান দেন। কর্মীবান্ধব নেতা হন, কর্মীদের মূল্যায়ন করুন। তারা কী চায়, সেদিকে খেয়াল করেন। কর্মীদের চোখের ভাষা, মনের ভাষা আপনাদের বুঝতে হবে। যদি না বোঝেন, তাহলে রাজনীতি করার দরকার নেই।’
কাদের বলেন, ‘যে নেতারা অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে দল ভারী করেছেন, আমি বলতে চাই দ্রুত এগুলো সরান। আওয়ামী লীগে গডফাদারদের দরকার নেই। প্রয়োজন রয়েছে জনপ্রিয় নেতার, সৎ ও নির্ভীক কর্মীর।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘মঞ্চের সামনে বসে থাকা সাধারণ কর্মীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা মঞ্চে বসে থাকা নেতাদের নিয়ে। আমরা কর্মীদের ব্যবহার করি। নিজেদের স্বার্থ রক্ষার পাহারাদার বানাই। কর্মীদের বলি, কারো স্বার্থ রক্ষার পাহারাদার হবেন না। তাহলে ভালো নেতা পাবেন না। অপকর্ম করলে দলে ভালো লোক আসবে না। আর খারাপ লোক আমাদের দরকার নেই।’
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় ওবায়দুল কাদের দলীয় পতাকা উত্তোলন ও পায়রা উড়িয়ে কর্মী সমাবেশের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি। সমাবেশ পরিচালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি। সমাবেশে রাজশাহী বিভাগের আট জেলা থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক ড. আবদুল খালেক, রাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল ইসলাম ঠাণ্ডু, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, আয়েন উদ্দিন, আবদুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার।