অস্তিত্বের প্রয়োজনেই বিএনপি নির্বাচনে আসবে : ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপিকে ভয় দেখিয়ে নির্বাচনে নিয়ে আসার প্রয়োজন নেই। বিএনপি তার অস্তিত্বের প্রয়োজনেই নির্বাচনে আসবে।’
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘কখনো গুলশানের চাপে, কখনো টেমস নদীর তীর থেকে আসে চাপ। সেই চাপে তিনি (ফখরুল) এমন সব কথা বলেন যা শুনে শিহরিত হই। আমরা নাকি ভয় দেখিয়ে নির্বাচনে আনতে চাই। কী কারণে? আমাদের দরকারটা কী? আমাদের কী প্রয়োজন বিএনপিকে ভয় দেখিয়ে নির্বাচনে নিয়ে আসার? বিএনপি তার অস্তিত্বের প্রয়োজনেই নির্বাচনে আসবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রাজনীতিতে কোনো রাজনৈতিক দল অপ্রাসঙ্গিক থাকতে চায় না। আরেকটা নির্বাচন না করলে বিএনপি কতটা অকার্যকর, অপ্রাসঙ্গিক এবং অস্তিত্বের দিক থেকে কতটা ঝুঁকিতে পড়বে এটা তাদের নেতারা ভালো করেই জানেন। নির্বাচনের এখনো দেড় বছর বাকি। আমি জানি নির্বাচনের রেজাল্ট পযন্ত তারা ভাঙা রেকর্ডটা বাজাবে। অংশ নেবে, আবার ভাঙা রেকর্ড বাজাবে।’
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনাদের কাউকে ভয় দেখাতে হয় না। আপনারা আপনাদের ঘরেই ভয়ের কারণ সৃষ্টি করেছেন। আপনাদের নেতা নেতাকে বিশ্বাস করে না। অফিসের মধ্যে মারামারি করেন। একজন আরেকজনকে বলে সরকারের এজেন্ট। কেউ বলে আওয়ামী লীগের এজেন্ট, কেউ বলে সরকারের এজেন্ট। ওই যে আন্দোলন সংগ্রাম না থাকলে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি হচ্ছে ক্ষমতার দল। ক্ষমতা না থাকলে বেপরোয়া হয়ে যায়। হারানো সিংহাসন ফিরে পাওয়ার জন্য একেবারে বেসামাল, বেপরোয়া বিএনপি। জল ঘোলা করে গাধা পানি খায়। আপনাদের শত্রু আওয়ামী লীগ নয়। আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র করে না। আওয়ামী লীগ বারে বারে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়।’ তিনি বলেন, ‘তোমারে বোধিবে যে গোকূলে বাড়িছে সে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিষাক্ত আলিঙ্গনে আপনারা। এই আলিঙ্গন ছিন্ন করতে না পারলে আপনারা দল হিসেবে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবেন।’
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের এক সঙ্গে দুটো কাজ করতে হবে। এক চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এবং তাদের দোসররা। তারা কিন্তু এখনো হুমকি হয়ে আছে। এখনো তারা তলে তলে ভয়াবহ আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, আঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর বারবার বলেছি পূর্ণাঙ্গ কমিটির কথা। তারা সর্ব শেষ উদ্যোগ নিয়েছে, কমিটি গঠনের জন্য সাব কমিটি। তাহলে কমিটি কবে গঠিত হবে? কমিটির একটা ডেট লাইন ঠিক করুন। দল এখন যে একটা চাঙা চাঙা ভাব। পকেট কমিটি যেন না হয়। কে কার ভক্ত, কে কার অনুগত এই বিবেচনায় ত্যাগী কর্মীদের দূরে ঠেলে দিবেন না। সেটা দলের জন্য শুভ হবে না। নেতায় নেতায় ভাগাভাগি করে পকেট ভারি করতে গিয়ে বাইরের পরগাছাদের কোনো সুযোগ দেবেন না। এটা আমার অনুরোধ আপনাদের কাছে। এই চাঙা ভাব দীর্ঘ দিন ধরে রাখতে হবে সাংগঠনিক শক্তি দিয়ে।’
৭ মার্চ সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পৃথিবীতে একক একটি দেশের স্বাধিকার সংগ্রামকে মুক্তির সংগ্রামে পরিণত করেছিল। এর দৃষ্টান্ত দুনিয়ার কোথাও নেই। আব্রাহাম লিংকনের গেটিস বার্গে দেওয়া ভাষণ ছিল লিখিত। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ ছিল সম্পূর্ণ অলিখিত ও উপস্থিত। এটা লিখিত নয়, এটা ছিল উপস্থিত। যে বঙ্গবন্ধু সত্তরের নির্বাচনের পরও ছিল আওয়ামী লীগ নেতা, এই ভাষণের পর তিনি হলেন সকল বাঙালির আস্থার ঠিকানা।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য কামরুল ইসলাম, মহানগর দক্ষিণ সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ।