বৃদ্ধাকে ‘মারধর’ করে ছেলেকে আটক, থানায় বিক্ষোভ
মধ্যরাতে এক বৃদ্ধাকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাঁর ছেলেকে আটকের অভিযোগ এনে ঝালকাঠির নলছিটি থানায় বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী। বিক্ষুব্ধরা তিন পুলিশ কর্মকর্তার অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।
আজ শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে টানা তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ মিছিল ও থানা ঘেরাও করে রাখেন উপজেলার কুলকাঠি ইউনিয়নের প্রায় ৫০০ নারী-পুরুষ।
বিক্ষোভকারীদের দাবির পর আজ দুপুর ২টার দিকে আটক রাজীব হাওলাদার (২২) নামের ওই যুবককে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে কুলকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান বাচ্চু।
দুপুরে রাজীব হাওলাদার বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে তিনি নিজের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় তাঁর কক্ষের দরজায় লাথির শব্দ শুনে ঘুম থেকে উঠে দরজা খোলেন। দরজা খুললে বাইরে পুলিশকে দেখতে পান। পুলিশ ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে জসিম নামে এক যুবককে খুঁজতে থাকে। তাঁকে না পেয়ে রাজীবকে আটক করে।
রাজীব আরো জানান, তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় বৃদ্ধ মা সেলিনা বেগম (৫৫-৬০) এর প্রতিবাদ করেন। পুলিশকে ছেলে আটকের কারণ জানতে চাইলে এক পুলিশ সদস্য লাঠি দিয়ে তাঁকে আঘাত করেন এবং আরেক সদস্য লাথি মারেন।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত সন্দেহে নলছিটি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিপ্লব মিস্ত্রি, এসআই জসিম ও এসআই ফিরোজের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুর রকিব।
বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কুলকাঠি ইউনিয়নের তৌকাঠি গ্রামের মাদক মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি জসিম মোল্লাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নলছিটি থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জাকির হোসেন ও কনস্টেবল নাসির উদ্দিন থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে হাতকড়াসহ আসামি পালিয়ে যায়। এ ঘটনার জের ধরে নলছিটি থানার চারজন এসআই ও দুজন এএসআইর নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল দিবাগত রাত ৩টার দিকে একই গ্রামের বাসিন্দা রাজীবের বাড়িতে জসিম আশ্রয় নিতে পারে সন্দেহে অভিযান চালায়।
বৃদ্ধাকে মারধর করে তাঁর ছেলেকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার খবর আজ শুক্রবার সকালে জানাজানি হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে কুলকাঠি ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নলছিটি যান। তারা থানা ঘেরাও করে ওই তিন পুলিশ কর্মকর্তার অপসারণের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করে।
বিক্ষোভকারীরা আরো জানায়, থানা ঘেরাওয়ের খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রকিব নলছিটি থানায় যান। এএসপি আটক রাজীব ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কয়েকজনের বক্তব্য শোনেন। পরে তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা শান্ত হয়। পরে পুলিশ কর্মকর্তার আশ্বাসে তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করে।
কুলকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, ‘পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে আসামি ধরতে গিয়ে আমার ইউনিয়নের তৌকাঠি গ্রামের মৃত ফারুক হাওলাদারের ছেলে নিরীহ যুবক রাজীবকে আটক করে। পরে থানায় নিয়ে তাঁকে মাধকসেবী সাজানোর চেষ্টা করে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত থানা অবরোধ করে রাখে। পরে পুলেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতায় বিষয়টির সুরাহা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম সুলতান মাহামুদ বলেন, ‘রাজীবের কাছে গাঁজা পাওয়া গেছে, তাই তাঁকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়। তাঁকে আটকের সময় কোনো নারীকে মারধর করা হয়নি।’
ঝালকাঠির এএসপি আবদুর রকিব বলেন, ‘রাজীব ও তাঁর এলাকার লোকদের থেকে লিখিত অভিযোগ নেওয়া হয়েছে। ওই তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং তাদের প্রত্যাহার করা হবে।’