মৌলভীবাজারের ‘জঙ্গিরা’ দিনাজপুরের!
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/04/02/photo-1491149708.jpg)
মৌলভীবাজারের সদর উপজেলার ফতেপুরে (এলাকাটি নাসিরপুর নামেও পরিচিতি) ‘জঙ্গি আস্তানা’য় নিহতদের শনাক্ত করার জন্য দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার একটি পরিবারকে ডাকা হয়েছে। আজ রোববার সকালে উপজেলার ডাঙ্গাগ্রামে পুলিশ গিয়ে বিষয়টি সেই পরিবারকে অবহিত করেছে।
ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইসমাইল হোসেন জানিয়েছেন, মৌলভীবাজার থেকে আমাদের জানানো হয়েছে সেখানে নিহত জঙ্গিরা ডাঙ্গাগ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে লোকমান ও তাঁর পরিবারের সদস্য হতে পারে। লোকমানের শ্বশুরবাড়িও একই গ্রামে। তাঁর শ্বশুর আবু বক্কর সিদ্দিককেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা লাশ শনাক্তের জন্য রাতে মৌলভাবাজারের উদ্দেশে বাসে উঠেছেন। এ ব্যাপারে আমরা তাদের সাহায্য করব।
অপরদিকে মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ শাহ জালাল এনটিভি অনলাইনকে রাতে জানিয়েছেন, ‘আমরা লাশ শনাক্তের জন্য দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার একটি পরিবারকে ডেকেছি। তারা আসুক, এসে যদি লাশ শনাক্ত করে তারপর এ ব্যাপারে কথা বলা যাবে। লাশ শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো কথা বলা যাচ্ছে না।’
পুলিশ রাতে জানিয়েছে, ডাঙ্গাগ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক, তাঁর ছোট মেয়ের জমাই এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মৌলভীবাজারের পথে রয়েছেন। আবু বক্কর সিদ্দিকের দেওয়া তথ্য মতে, তাঁর বড় মেয়ে মোছাম্মাৎ শিরিনা আক্তার (৩৫), তাঁর স্বামী লোকমান হোসেন (৪৫), তাদের বড় মেয়ে মোছাম্মাৎ আমেনা খাতুন (২০) (কিছুদিন আগে তার বগুড়ায় বিয়ে হয়েছে), মেয়ে সুমাইয়া (১২), মরিয়ম (১০), ফাতেমা (৭), খাতিজা (সাত মাস) দীর্ঘদিন ধরেই পরিবারবিচ্ছিন্ন। লোকমানের বাবা নুরুল আলম এবং ডাঙ্গাপাড়ার বাসিন্দা নূর হোসেন, আবাদুর রশিদ, ময়নুল ইসলাম জানান, ৮-১০ বছর ধরে তারা গ্রামের বাইরে।
গত ২৯ মার্চ (বুধবার) সন্ধ্যায় মৌলভীবাজারের ‘জঙ্গি আস্তানা’ মধ্যে ফতেপুরে ‘অপারেশন হিটব্যাক’ শুরু করে সোয়াট। রাতে অভিযান বন্ধ করে দিয়ে পরের দিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে অভিযান শুরু হয়।
অভিযান শেষে সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়ন কমপ্লেক্সে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অভিযান শেষ হয়েছে। আমরা ভেতরে বেশ কিছু লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখেছি। সেগুলো একত্রিত করলে পুরো সংখ্যাটি পাওয়া যাবে। তবে, তা সাত-আটজনের কম হবে না। এরা আত্মহনন করে থাকতে পারে।’
‘ক্ষমা করে দিও, আর দেখা হবে না’
লোকমান আলীর শ্বশুর আবু বক্কর সিদ্দিক আজ ডাঙ্গাগ্রামে সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত বুধবার রাতে একটি অচেনা মোবাইল নম্বর থেকে বাড়িতে কল আসে। মোবাইলে আমার মেয়ে শিরিন বলে, বাবা আমাকে ক্ষমা করে দিবে। আমাদের সঙ্গে আর কোনোদিন দেখা হবে না। কিয়ামতের দিনে দেখা হবে বলে ফোন কেটে দেন।’
মোবাইলে প্রথমে কথা বলেন শিরিন আক্তারের মেয়ে আমেনা খাতুন। ফোনে দু-একটি কথা বলার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন আমেনা। তিনি আর কথা বলেননি। পরে ফোনটি তাঁর মা শিরিনা আক্তারকে দেন। শিরিনা তখন বাবার সঙ্গে কথা বলেন।
লোকমান আলীর বাবা নুরুল ইসলাম জানান, তাঁর সঙ্গে ছেলের দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগ নেই। তিনি নিজেও অসুস্থ। তিনি লাশ নিতে যাবেন না।
ডাঙ্গাগ্রামের নুর হোসেন, আবাদুর রশিদ, ময়নুল ইসলাম জানান, কয়েক বছর আগে ঢাকায় চাকরি করতে গিয়েছিলেন লোকমান। ২০০৮ সালের দিকে তিনি একটি মামলায় আসামি হন। তার পরই তিনি এলাকা ছাড়েন।
ঘোড়াঘাট থানার ওসি মো. ইসরাইল হোসেন আরো জানান, লোকমান চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২০০৮ সালে জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত হন। এ সময় তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলায় আদালত থেকে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
লোকমানের বাবা ও শ্বশুর প্রথমে লাশ শনাক্ত বা গ্রহণ করতে যেতে চাননি। পুলিশ সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়ার পর তাঁরা যেতে রাজি হন বলে জানান ওসি।