‘আমরাও এখন একেকজন বিজ্ঞানী’
খুলনার রূপসা উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ৪২ জন ছাত্রী শিখেছে কীভাবে গবেষণা করতে হয়। কেবল ক্লাসের চার দেয়ালে আবদ্ধ না থেকে নদীর পলিমাটি পর্যবেক্ষণ, গাছের অনুভূতি বিশ্লেষণ, বিভিন্ন উৎসের পানির তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করে।
গত ২১ জুন থেকে ২৩ জুন খুলনার রূপসা উপজেলার কমরেড রতন সেন কলেজিয়েট গার্লস স্কুলে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিএফএফ-এসপিএসবি শিশু কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেস ২০১৫-এর প্রথম কুদরাত-ই-খুদা সামার সায়েন্স ক্যাম্প। তিনদিনের এই ক্যাম্পে অংশ নেয় স্কুলের বিভিন্ন শ্রেণীর ৪২ জন শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ক্যাম্পে শিক্ষার্থীদের শেখানো হয় কীভাবে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করতে হয়। ক্যাম্পে সবাই একটি করে বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রকল্পে অংশ নেয়। ক্যাম্পটি পরিচালনা করেন শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেসের একাডেমিক সমন্বয়কারীরা।
শিক্ষার্থীরা ছয়টি দলে ভাগ হয়ে একটি গবেষণা প্রকল্পে কাজ করে। তিনদিনের ক্যাম্পের শুরুতে তাদের শেখানো হয় গবেষণার কর্মপদ্ধতি। দলগুলো স্কুলের আশপাশের এলাকার পরিবেশ-প্রতিবেশ দেখে বিভিন্ন সমস্যা খুঁজে বের করে।
সমস্যাগুলোর মধ্য থেকে ছয়টি দল ছয়টি সমস্যা বেছে নেয়। পরবর্তী দুদিন গবেষণা করে সেগুলোর সমাধানের উপায় খুঁজে বের করে। এর মধ্যে ছিল স্কুলসংলগ্ন আঠারোবাঁকী নদীর পলিমাটি পর্যবেক্ষণ এবং পলি জমা হওয়ার পরিমাণ নির্ণয়, দ্বিপক্ষল যৌগিক পত্রবিশিষ্ট গাছের অনুভূতি প্রবণতা বিশ্লেষণ, মানুষের উচ্চতার সঙ্গে প্রতিটি স্বাভাবিক পদক্ষেপে অতিক্রান্ত দূরত্বের সম্পর্ক নির্ণয়, বিভিন্ন উৎসের পানির তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ এবং তারতম্যের কারণ বিশ্লেষণ, মিষ্টিজাতীয় দ্রব্যের প্রতি পিঁপড়ার আকর্ষণ এবং তা দূরীকরণের উপায়, বিভিন্ন পরিবেশে লজ্জাবতী গাছের অনুভূতি প্রবণতা নির্ণয়। ক্যাম্পের শেষদিন শিক্ষার্থীরা তাদের গবেষণার ফলাফল বৈজ্ঞানিক পোস্টারের মাধ্যমে উপস্থাপন করে।
এসব শিক্ষার্থী এর আগে কখনো বৈজ্ঞানিক পোস্টারের নামও শোনেনি। গ্রামের এই মেয়েদের বেশির ভাগই কোনোদিন কম্পিউটার ব্যবহার করেনি, অধিকাংশই জানে না ইন্টারনেট কী। এমন সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা এমন সব চমৎকার গবেষণা এবং বৈজ্ঞানিক পোস্টার তৈরি করে সবাইকে মুগ্ধ করে।
ক্যাম্পের সমাপনী দিনে ছয়টি দল তাদের পোস্টার সবার সামনে উপস্থাপন করে। সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এস এম লিয়াকত, যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব ও স্কুল পরিদর্শক এবং কমরেড রতন সেন কলেজিয়েট গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
ক্যাম্পে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী স্বর্ণা বলে, ‘অসাধারণ তিনটি দিন কাটল। এখানে আমরা চিন্তা করার নতুন উপায় শিখলাম, বিজ্ঞানীরা কীভাবে গবেষণা করে তা জানলাম। সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার হলো, আমরাও একটি গবেষণা করলাম। তার মানে আমরাও এখন একেকজন বিজ্ঞানী।’
সমাপনী অনুষ্ঠানে এস এম লিয়াকত বলেন, ‘এই বিজ্ঞানচর্চা আমাদের শিক্ষার্থীদের অনেক দূর এগিয়ে নেবে। আমরা চাই এমন আয়োজন নিয়মিত করা সম্ভব হোক। তাতে আমাদের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।’
ক্যাম্পের অন্যতম পরিচালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইফ ফাতিউর রহমান বলেন, ‘এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা অসম্ভব মেধাবী এবং সম্ভাবনাময়। এই তিনদিন তাদের মধ্যে যে জানার আগ্রহ তাতে বোঝা যায় সুযোগ পেলে এরাও ভবিষ্যতে অনেক ভালো করবে।’
ক্যাম্পের আরেক নির্দেশক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী শেখ মোহাম্মদ আরমান ক্যাম্প নিয়ে অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, ‘এই তিনদিন আমি অনেকগুলো মেয়েকে বদলে যেতে দেখলাম। কয়েকজন নিশ্চয় সব প্রতিকূলতা জয় করে এগিয়ে যাবে। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও এই মেয়েগুলোর এভাবে শেখার আগ্রহ আমাকেও অনেক উৎসাহিত করেছে, আমিও নতুন করে অনুপ্রাণিত হয়েছি।’ ক্যাম্পটি পরিচালনা করেন শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেসের একাডেমিক সমন্বয়কারীরা।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেসের প্রস্তুতিমূলক কুদরত-ই-খুদা সামার সায়েন্স ক্যাম্প পর্যায়ক্রমে সারা দেশে আয়োজন করা হচ্ছে। ২৬ জুন নারায়ণগঞ্জে, ২৭ জুন সিলেট ও দিনাজপুরে এবং ২৯ জুন ঢাকায় শুরু হবে পরবর্তী কুদরত-ই-খুদা সামার সায়েন্স ক্যাম্প। ক্যাম্প বা কংগ্রেস সম্পর্কে জানা যাবে কংগ্রেসের www.spsb.org/cscongress ওয়েবসাইটে।