সোহেলের মরদেহ চারদিন পর ফেরত দিয়েছে বিএসএফ
ভারতীয়দের হাতে নিহত বাংলাদেশি যুবক সোহেল আহমেদের (২৭) গলিত লাশ অবশেষে চারদিন পর ফেরত দিয়েছে সে দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
আজ রোববার বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে সাতক্ষীরার ভোমরা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে সোহেলের মরদেহ আনা হয়। ভারতীয়রা সীমান্তের মেইন পিলার ৩-এর কাছে দুই দেশের শূন্য লাইনে ব্রিজের ওপর এনে তাঁকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। এ সময় সোহেলের আত্মীয়স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। সৃষ্টি হয় হৃদয় বিদারক দৃশ্যের।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ভোমরা কোম্পানি কমান্ডার নায়েক সুবেদার আবুল কাসেম জানান, সোহেলের মরদেহ হস্তান্তরের সময় বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন তিনি নিজে ও ইমিগ্রেশন ওসি মিজানুর রহমান। তাঁদের হাতে লাশ তুলে দেন বিএসএফের ঘোজাডাঙ্গা কোম্পানি কমান্ডার ইনসপেক্টর অজিত রায়। এ সময় ভারতীয় পুলিশ সদস্যরা ছাড়াও সোহেলের চাচা শহীদ হোসেন ও নানা আরিফুল ইসলামসহ আত্মীয়স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
নিহত সোহেলের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম হাড়দ্দহার আবু সালেকের ছেলে সোহেল আহমেদ গত বৃহস্পতিবার ভারতে গরু আনতে যান। রাতে গরু নিয়ে ফেরার সময় কয়েকজন ভারতীয় নাগরিক তাঁকে মারধর করেন। একপর্যায়ে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে বিএসএফের কাছে হস্তান্তরের চেষ্টা চালান। বিএসএফ সোহেলকে নিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁকে বসিরহাট থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। পথে মারা যান সোহেল। ভারতীয়রা তাঁর মরদেহ বসিরহাটের সংগ্রামপুর ব্রিজের কাছে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে সেখানেই পড়ে ছিল লাশটি। পরে বসিরহাট থানার পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে নিয়ে ময়নাতদন্ত করায়। খবর পেয়ে সোহেলের আত্মীয়স্বজন পাসপোর্টসহ ভারতে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন।
এদিকে এ খবর পেয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে বিজিবির ৩৮ ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর মোজাম্মেল ও ভারতের ১৪৪ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের পক্ষে কমান্ড্যান্ট রত্নেশ্বর নিজ নিজ দেশের নেতৃত্ব দেন। বিজিবি এই হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে লাশ ফেরত দাবি করে। সে অনুযায়ী রোববার তাঁর মরদেহ হস্তান্তর করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, চারদিনে সোহেলের লাশে পচন ধরেছে। হস্তান্তরের সময় দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল বলে জানান তাঁর পরিবারের লোকজন।
সীমান্তেই সোহেলের মা-বাবার মৃত্যু
নিহত সোহেলের মা তানজিলা খাতুনকে ১৯৯৯ সালে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে কে বা কারা হত্যা করে সাতক্ষীরা সীমান্তের দাঁতভাঙ্গা বিলে মাটিতে পুতে রেখেছিল। এর কিছুদিন পর তাঁর বাবা আবু সালেকের লাশ পাওয়া যায় বাংলাদেশ ভারত সীমান্তের ঘোজাডাঙ্গার একটি খালের মধ্যে। আজও তাঁদের মৃত্যুরহস্য উদঘাটিত হয়নি।
সোহেলের স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাঁর একমাত্র বোনের বিয়ে হয়েছে আগেই।