কক্সবাজারে ৬৭০ গ্রামের দেড় লাখ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত

কক্সবাজার জেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। গত দুদিন বৃষ্টি না হওয়ায় বাঁকখালী, মাতামুহুরীসহ প্রধান নদীগুলোতে পানি কমতে শুরু করায় স্বস্তি বিরাজ করছে। বিভিন্ন এলাকার আশ্রয়কেন্দ্র থেকে দুর্গত মানুষ বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। তবে চকরিয়া, রামু ও পেকুয়া উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে মারাত্মক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এসব ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম এখনো তিন-চার ফুট পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় জানিয়েছে, এবারের বন্যায় কক্সবাজারের ৫৯ ইউনিয়নে ৬৭০ গ্রামের দেড় লাখ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, বিএম চর, পশ্চিম বড়ভেওলা, পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়ন; রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ, রাজারকুল ও মিঠাছড়ি ইউনিয়নে বন্যার পানি সরে না যাওয়ায় মারাত্মক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার অনেকেই সড়ক, মহাসড়কে আশ্রয় নিয়েছে।
অন্যান্য বছরের বন্যার তুলনায় এবারের বন্যায় পানি বেশি হওয়ায় প্লাবিত এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। জেলা প্রশাসন ইউনিয়নভিত্তিক ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তথ্য নিরূপণ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সচিব বরাবরে তথ্য পাঠিয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম এনটিভি অনলাইনকে জানান, এবারের বন্যায় কক্সবাজার জেলায় ৫৯টি ইউনিয়নে ৬৭০ গ্রামের দেড় লাখ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউনিয়নভিত্তিক এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সদর উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি ইউনিয়নের ৯৫টি গ্রাম চরমভাবে ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির শিকার হয়েছে ৪০ হাজার বাড়িঘর। এখানে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৬ টন চাল ও নগদ এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। সদরে ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা এক লাখ ৬০ হাজার জন।
রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ১৯৯টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ৪২ হাজার ১৫০টি। বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৯ টন চাল এবং নগদ দুই লাখ ৯০ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা এক লাখ ৬৮ হাজার ৬০০ জন।
চকরিয়ার ১৮টি ইউনিয়নে ২২১টি গ্রামের ৪৫ হাজার ৪০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪০ টন চাল এবং নগদ টাকা দুই লাখ ৯০ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা এক লাখ ৮০ হাজার ১৬০ জন।
পেকুয়ার সাতটি ইউনিয়নের ৯০টি গ্রামের ২০ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৭ টন চাল এবং নগদ এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৮০ হাজার।
মহেশখালীতে চারটি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের ৩০০টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পাঁচ টন চাল ও নগদ ৫০ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা এক হাজার ২০০।
কুতুবদিয়ার তিনটি ইউনিয়নের ১২টি গ্রামের এক হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে চার টন চাল এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা চার হাজার।
উখিয়ায় একটি ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের ৩০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের জন্য তিন টন চাল এবং ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলায় পাঁচটি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের এক হাজার ২৩০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ছয় টন চাল এবং নগদ এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা চার হাজার ৯২০ জন।
এ ছাড়া কক্সবাজার পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পাঁচ টন চাল ও ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল রোববারের প্রাথমিক প্রতিবেদনে ক্ষতিগ্রস্তের এ তালিকায় জেলায় ১৯১ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি, প্রায় এক হাজার ২৪০ একর ফসলের ক্ষতি এবং ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ৪০টি গবাদি পশুর ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. অনুপম সাহার সভাপতিত্বে আজ সোমবার জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুর্যোগ মোকাবিলায় সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয় এবং ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তথ্যাদি প্রকাশ করা হয়।