মোরায় লণ্ডভণ্ড সেন্টমার্টিনে চালের সংকট
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’য় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের সর্বদক্ষিণের সেন্টমার্টিন দ্বীপ। ঝড়ে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির পর গতকাল বুধবার থেকে দ্বীপে ত্রাণ বিতরণ শুরু করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতেই নৌবাহিনীর ত্রাণবাহী জাহাজ ত্রাণ নিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পৌঁছে। গতকাল সকাল থেকে দ্বীপের ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের মধ্যে এসব বিতরণ করা হয়।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই ত্রাণে কেবল শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। প্রতিটি প্যাকেটে এক কেজি করে মুড়ি, চিড়া, গুড় ও পানির বোতল দেওয়া হচ্ছে।
অথচ ঘূর্ণিদুর্গত সাড়ে আট হাজার দ্বীপবাসী আকস্মিক খাদ্যাভাবের মুখে পড়েছে। দ্বীপে গতকাল বুধবার এক কেজি মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৫০/৫১ টাকা করে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের পশ্চিমপাড়ার চাল দোকানি জাফর আলম গতকাল সন্ধ্যায় মোবাইলে বলেন, ‘টেকনাফের সঙ্গে কদিন ধরে নৌ চলাচল বন্ধ থাকায় দ্বীপে চালসহ নিত্যপণ্যের তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। আমার দোকানে ১৩ বস্তা মোটা চাল ছিল। এর মধ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আট বস্তা চাল বাকিতে বিক্রি করেছি। কারণ, ক্রেতারা সবাই আত্মীয়স্বজন।’
জাফর আলম আরো বলেন, ‘চটের বস্তার ৫০ কেজির চাল বিক্রি করছি দুই হাজার ৬০০ টাকা এবং প্লাস্টিকের বস্তার ৫০ কেজির চাল বিক্রি করা হচ্ছে দুই হাজার ৪০০ টাকা করে। এক কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। ’
চাল দোকানি জাফর আলম জানান, ঝড়কবলিত দ্বীপবাসীর মধ্যে এক কেজি করে চিড়া, মুড়ি, গুড় ও এক বোতল করে পানি বিতরণ করা হয়েছে।
জাফর আলম আক্ষেপ করে বলেন, এই রমজানে এমন শুকনা খাবারে ক্ষুধা জুড়ায়?
দ্বীপের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক জসিম উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, ‘দ্বীপের মানুষ এখন বড়ই বিপদের মুখে। এমন কোনো ঘর নেই, যা ক্ষতির শিকার হয়নি। দ্বীপের গাছগুলো ভেঙে ঘরের চালে পড়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে।’
সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবছার কামাল বলেন, ‘দ্বীপে একদিকে নিত্যপণ্যের অভাব দেখা দিয়েছে, অন্যদিকে দ্বীপের বাসিন্দাদের হাতে নগদ টাকাও নেই। এ অবস্থায় মানুষ সত্যি বেশ কষ্টে রয়েছে।’
সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ জানান, আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকায় টানা কয়েক দিন ধরে টেকনাফের সঙ্গে দ্বীপের নৌ যোগাযোগ বন্ধ থাকায় আকস্মিক পণ্যসামগ্রীর অভাব দেখা দিয়েছে। তবে আবহাওয়া পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার থেকে টেকনাফের সঙ্গে নৌ চলাচল শুরু হবে। তখন পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানিয়েছেন, ‘দ্বীপে পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এখানে ত্রাণের কোনো অভাব নেই। যতটুকু সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা একদম সাময়িক। গতকাল বুধবার নৌবাহিনীর জাহাজে যেসব শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে তা-ও জরুরি ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক আরো জানান, সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ বৃহস্পতিবার কক্সবাজার আসছেন। আগামীকাল তিনি হেলিকপ্টারে করে সেন্টমার্টিন ও মহেশখালী দ্বীপে যাবেন। সেন্টমার্টিনের জন্য ২০ টন চাল বরাদ্দ করার তথ্য দিয়ে জেলা প্রশাসক জানান, কেবল যাতায়তের সমস্যার কারণে এই ত্রাণ পৌঁছাতে সমস্যা হচ্ছে।