পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন নিয়ে সন্তু লারমার সংশয়
সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে না পারলে পার্বত্য চুক্তি আর বাস্তবায়ন হবে না বলে সংশয় প্রকাশ করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)।
সন্তু লারমা বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের দীর্ঘসূত্রতা পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টি করছে। রোববার সকালে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক ও নারী হেডম্যান-কার্বারি নেটওয়ার্কের আয়োজনে দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন।
সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কর সহ-সভাপতি শক্তিপদ ত্রিপুরা সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা। সম্মেলনের উদ্বোধক ছিলেন চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। বিশেষ অতিথি ছিলেন বরকল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনি চাকমা, জাতিসংঘ উন্নয়ন কমসূচি (ইউএনডিপি) জেন্ডার অ্যান্ড লোকাল কনফিডেন্স বিল্ডিং ক্লাস্টারের টিম লিডার ঝুমা দেওয়ান।
উদ্বোধকের বক্তব্যে চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, জনপ্রতিনিধিরা যেকোনো একটি নিদিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচিত হন আর অন্য দিকে একজন গ্রামের হেডম্যান বা কার্বারিরা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করতে পারেন। যদি না তাদের নামে কোনো অভিযোগ থাকে। তাই এই হেডম্যান-কার্বারিদের গ্রামের লোকের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানার সুযোগ রয়েছে। এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে গ্রামের মানুষের সার্বিক সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে বলে তিনি জানান।
দেবাশীষ রায় আরো বলেন, কিছু কিছু হেডম্যানের অদক্ষতার কারণে ভূমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে, সেই জন্য সব ক্ষেত্রে দক্ষতা সর্ম্পূণ এবং সঠিক নেতৃত্ব রাখার আহ্বান জানান তিনি। আগামী বছর খাদ্য সংকটে পড়ার আশংকা প্রকাশ করে তিনি বলেন, কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাচ্ছে, এ ছাড়া জমির বিভিন্ন সমস্য থাকার কারণে আগামী বছরে সাজেকের মতো পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। সেজন্য এখন থেকে প্রস্তুত থাকার জন্য তিনি সরকারকে আহ্বান জানান।
লংগদু প্রসঙ্গে চাকমা সার্কেল চিফ নিন্দা জানিয়ে বলেন, নয়ন হত্যা এবং পাহাড়িদের বাড়ি-ঘরে আগুন লাগানো উভয় কর্মকাণ্ডকে আমরা নিন্দা জানাই। তিনি আরো বলেন, বিগত সময় এবং বর্তমানে আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাই বাঙালিরা পাহাড়িদের গ্রামে আগুন লাগিয়েছে, কিন্তু পাহাড়িরা বাঙালিদের গ্রামে আগুন লাগিয়েছে এমন নজির নেই। লংগদু প্রশাসন অদক্ষতা এবং পক্ষপাতি অবস্থায় ছিল বলে উগ্র-বাঙালিরা এমন কাজ করতে পেরেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ইউএনডিপির ঝুমা দেওয়ান বলেন, বিগত সময় থেকে গ্রাম ও মোজার হেডম্যান ও কার্বারি ছিলো পুরুষ কিন্তু বর্তমানে পুরুষের তুলনায় নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ইউএনডিপি গ্রামে নারীদের দক্ষতা ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করণে কাজ করবে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আগামীতে আমরা গ্রামের নারীদের নিয়ে কাজ করবো। তাদের দক্ষতা ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করলে কাজ করার প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে ইতিমধ্যে। নারী সমাজের একটি বিশেষ অংশ। এই নারীকে বাদ দিয়ে সমাজ উন্নত করা সম্ভব না। তাই আমরা সকলের মিলে নারীকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করতে হবে। গ্রামের বিভিন্ন বিচার ও সামাজিক অনুষ্ঠানে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সোমবার সম্মেলন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।