রংধনুর মতো বৈচিত্র্যে ঐক্যবদ্ধ দেশ গড়তে চায় বিএনপি
বিএনপি ক্ষমতায় এলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বা হানাহানি নয়, বরং দীর্ঘ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পথ ধরেই জাতিকে রংধনুর বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ রেখে দেশ পরিচালনা করবে। এটাই বিএনপির রূপকল্পের মূল বয়ান বলে মনে করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমরা বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের সন্ধান করব, যাতে মানুষে মানুষে বিভেদ দূর হয়ে একটি কল্যাণকর রাষ্ট্রের পথে অগ্রসর হতে পারি। এটাই এই ভূখণ্ডের মানুষের সাংস্কৃতিক ঐহিত্য।’
বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ‘বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে মানুষ রাস্তায় যেমন আন্দোলন করছে; ঠিক তেমনি মানুষের মনেও সরকারবিরোধী ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। মানুষের মনের সেই ক্ষোভ যারা পড়তে পারে না তাদের চরম মূল্য দিতে হয়। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা, আওয়ামী লীগকে সেই মূল্য দিতে হবে।’
বিগত সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য মনোনীত হন চট্টগ্রামের রাজনীতিবিদ আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। চট্টগ্রামের প্রখ্যাত এক রাজনৈতিক পরিবারে তাঁর জন্ম। দেশ-বিদেশে পড়াশোনা করেছেন। চট্টগ্রাম থেকে পরপর চারবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
বর্তমান সময়ের রাজনীতি, বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন, পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে এনটিভি অনলাইনের মুখোমুখি হয়েছিলেন বিএনপির এই প্রভাবশালী নেতা। বিশেষ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন এনটিভি অনলাইনের সাংবাদিক চন্দন সাহা রায় ও আহমেদ আল আমীন।
এনটিভি অনলাইন : নির্বাচন কমিশন সংলাপ শুরু করতে যাচ্ছে। বিএনপি সেখানে কী ধরনের প্রস্তাব তুলে ধরবে?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে, ভোটাধিকার হারিয়ে ফেলেছে। এর ফলে বাকি গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোও হারাচ্ছে। এটাই নিয়ম। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা ছিল। যদিও তা সফল হয়নি। তারপরও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়, যোগাযোগ হচ্ছে। আমরা নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগের নেতিবাচক রাজনীতির বিপরীতে ইতিবাচক রাজনীতি করছি। যা জনগণ ভালো চোখেই দেখছে। কেন নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে তা চিহ্নিত করতে হবে। একটি দৃশ্যমান সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ভোটের জন্য যা যা করার দরকার সেই প্রস্তাবনাই দেবে বিএনপি। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা মনে করি, নির্বাচনের ব্যাপারে সবার ঐকমত্যও হওয়া উচিত। এটা কেবল বিএনপি, আওয়ামী লীগের ব্যাপার না। এটা জাতির ব্যাপার। সেই বিষয় বিবেচনায় নিয়েই বিএনপি প্রস্তাব দেবে।
এনটিভি অনলাইন : বিএনপি বলছে, সহায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। আবার আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। বিএনপি বলছে, তাঁরা সহায়ক সরকারের একটি রূপরেখা দেবে। এর কতদূর?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : সহায়ক সরকারের কথা কেন এসেছে? কারণ, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। এই নির্দলীয় সরকারের উদ্যোক্তা ছিল আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী। এখন তা বাতিল করা হল। তাহলে এর প্রতিস্থাপন কী হবে? এটা তো নির্বাচনের প্রথম শর্ত। তাই বিকল্প ব্যবস্থা তো করতে হবে। সে জায়গাতেই আমরা প্রস্তাব দিয়েছি।
এনটিভি অনলাইন : কিন্তু সংবিধানে সহায়ক সরকারের কথা নেই। আওয়ামী লীগ তো সংবিধানের বাইরে যেতে চাচ্ছে না। বিএনপি কি বিকল্প কিছু ভাবছে?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : সংবিধান তো জনগণের জন্য, সংবিধানের জন্য জনগণ নয়। কোনো দলের বা গোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য তো সংবিধান নয়। প্রয়োজনে তা বারবার বদলাতে হবে। জাতির প্রয়োজনেই তা একবার নয়, বারবার বদলাতে হবে। দেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার হরণ করে উনারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা
করেছিলেন। বিএনপি সংবিধান সংশোধন করে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেছে। এখনো আওয়ামী লীগ সংবিধান ব্যবহার করতে চাচ্ছে নিজেদের স্বার্থে। জনগণের স্বার্থে, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে বার বার সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সংবিধানের দোহাই দিয়ে নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণের কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না।
এনটিভি অনলাইন : সহায়ক সরকার বা সংবিধান সংশোধনের জন্য তো বিএনপি কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। একে কীভাবে মোকাবিলা করবেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : এই ইস্যুটা বিএনপি বা আওয়ামী লীগের নয়। মানুষ যেন ভোট দিতে পারে, সেটা নিশ্চিত করাই প্রধান বিষয়। কোনো দলের ইচ্ছা হল কি হল না, সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হল কি-না তা বিবেচ্য নয়। আওয়ামী লীগের প্রত্যাশা যদি জাতির প্রত্যাশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় সেটা আওয়ামী লীগের সমস্যা। সেই সমস্যার সমাধান তাদের দিতে হবে। এ নিয়ে আন্দোলন জাতিকেই করতে হবে। কেউ যদি জাতির মালিকানা, ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে যায় তাদের পরাজিত করতে হবে। তাদের ক্ষমা করা যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ সেটা বারবার করে দেখিয়েছে। দেশের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটও ছিল কিন্তু ভোটাধিকার প্রয়োগ। শাসকরা সেদিন মানুষের ভোটের রায় উপেক্ষা করেছিল বলেই শুরু হয়েছিল মুক্তির সংগ্রাম।
এনটিভি অনলাইন : বিএনপি কি সেভাবে মানুষের মধ্যে যেতে পেরেছে বলে মনে করেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : রাস্তার বাইরেও মানুষের মনে আন্দোলন চলছে। এটা যারা উপলব্ধি করতে পারছেন না তাঁদের রাজনীতিবিদ বলে আমি মনে করি না।
আমরা কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলেছি। মানুষের মনকে জাগ্রত করেছি। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে আমাদের প্রস্তাবনা নাড়া দিয়েছে মানুষকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির তথ্য আমরা জাতির সামনে তুলে ধরেছি। রামপাল নিয়ে আমরা কেন বিরোধিতা করছি তা তুলে ধরেছি। গবেষণা করেই এগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। আমরা রূপকল্প-২০৩০ দিয়েছি। এখানে বিএনপির ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। জাতিকে আমরা কোথায় নিয়ে যেতে চাই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত সেখানে বলা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আসবে।
এনটিভি অনলাইন : বিএনপির কি সেই সাংগঠনিক অবস্থান আছে? তৃণমূলে তো বিএনপি অনেক বিচ্ছিন্ন, নেতারা মাঠে নেই…
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : মানুষ সব সময় শক্তিশালী দল দেখে ভোট দেয় না, ভোট দেয় দলের ওপর আস্থার কারণে। দলকে শক্তিশালী করাটা জরুরি। কিন্তু মানুষ ভোট দিচ্ছে কারণ তারা বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। মানুষ বিএনপিকে ভালোবাসে সেই কারণে তারা বিএনপিকে ভোট দেবে। অতীতেও সেটা দেখা গেছে। তারা চায়, এই আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা থেকে বিদায় নিক।
এনটিভি অনলাইন : সেই ভোট সবটা বিএনপির নয়, সরকারবিরোধী ভোটও আছে। সেটা কতটা টানতে পারবে বিএনপি?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : হ্যাঁ, এটা হয়তো আছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, আওয়ামী লীগ খারাপ করছে বলে আমরা জয়ী হলাম তা নয়; বরং জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করছি তা জনগণ নিচ্ছে কি-না সেটাই বড় কথা। সরকারবিরোধী ভোট দিয়ে হয়তো ক্ষমতায় আসা যায়। কিন্তু এটা কোনো সমস্যার সমাধান নয়। দলকে মানুষের আস্থার ওপর নির্ভর করে শক্তিশালী করাটাই সবচেয়ে ভালো।
এনটিভি অনলাইন : আপনারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করা কি ভুল ছিল?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যে ভোটের ব্যবস্থা করল, তাতে কোনো আস্থার পরিবেশ তৈরি হলো না। সেই নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া একই কথা। মানুষের আস্থা না থাকলে তাঁকে নির্বাচন বলা যাবে না। ১৫৪টি আসনে মানুষ ভোট দেয়নি। এতেই আস্থাহীনতার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। ফলে এই ধরনের নির্বাচন জনগণের মধ্যে কোনো আস্থা তৈরি করে না।
এনটিভি অনলাইন : বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী রাজনীতি নিয়ে নানা সমালোচনা আছে। দলটি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম সঙ্গী। এ সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন করার কোনো কথা কি বিএনপি ভাবছে?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির আদর্শগত ও নীতিগতভাবে কোনো মিল নেই। কৌশলগত কারণে জোটে আছে। যেখানে মানবাধিকার, গণতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ- এমন মৌলিক সমস্যা থেকে বের হতে প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন, সেখানে অনেকেই এসেছে। ঘরে আগুন লেগেছে - পানি নিয়ে অনেকেই এলো, আমি তো কাউকে বারণ করতে পারি না। আগুন নেভাতে গেলে কে কোন পন্থী তা জানার প্রয়োজন নেই। সব আন্দোলনে তাই হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যার যার অবস্থানে থেকে এগিয়ে এলো আমরা স্বাগত জানাই। আওয়ামী লীগ তো এ ক্ষেত্রে নৈতিক অবস্থানে নেই। তারাই তো খেলাফতে মজলিশের সঙ্গে পাঁচদফা চুক্তি করেছে, হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সমঝোতা করেছে, রাজনৈতিক খেলাধুলা করছে।
এনটিভি অনলাইন : বড় দুটি দলের বিরুদ্ধেই তো এ ধরনের ‘রাজনৈতিক খেলাধুলার’ অভিযোগ রয়েছে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : আমরা তো তাদের কথা মেনে রাষ্ট্র পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেইনি। তাদের সঙ্গে কোনো চুক্তি করিনি। কিন্তু আওয়ামী লীগ আজকে সেটা করছে এবং এটা জাতিকে সর্বনাশের দিকে নিয়ে যাবে।
এনটিভি অনলাইন : মানুষ মনে করে এ দেশে হানাহানির রাজনীতি বাড়ছে। আওয়ামী লীগ তাঁর কর্মীদের সতর্ক করে বলেছে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে কঠোর পরিস্থিতির মুখোমুখি তাদের হতে হবে। বিএনপি কি আশ্বস্ত করতে পারে যে, তারা ক্ষমতায় এলে কেউ প্রতিহিংসার শিকার হবে না, বা রাজনৈতিক হানাহানি কমবে?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : রূপকল্প-২০৩০ এ আমরা সেটা পরিষ্কার করেছি। আইনের শাসন কার্যকর করাই হবে বিএনপির শাসনের মূল কথা। কেউ দোষী হলে, আইন সেটা দেখবে। আওয়ামী লীগ তো এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে, জুডিশিয়ারিকে (বিচার বিভাগ) ব্যবহার করছে। আমরা সেটা করব না। দেশকে আমরা যে জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, সেখানে এসব থাকবে না। আমরা সবাইকে নিয়ে একটা রেইনবো নেশন তৈরি করতে চাই। একটা কল্যাণকর রাষ্ট্র করতে চাই। এটা করতে চাইলে আমাদের আইনের শাসন কার্যকর করার পথেই যেতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
এনটিভি অনলাইন : আইনের শাসন কায়েমের জন্য তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটা বড় ভূমিকা আছে। বিএনপি অভিযোগ করেছে যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরকার নিজস্ব বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছে। বিএনপি কি সেটা করবে না?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : এটা আমরা বলেছি, সবার নিজ নিজ দায়িত্ব নির্ধারিত আছে। এর বাইরে কেউ কিছু করতে পারবে না, সে যে বাহিনীই হোক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখা, নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা। এর বাইরে কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। দায়িত্বের বাইরে গিয়ে যদি কেউ কিছু করে তা যদি নাগরিক স্বার্থবিরোধী কাজ হয় তবে তাদের প্রয়োজন নেই। রূপকল্প-২০৩০ এ এই বিষয়টা আমরা পরিষ্কার করে বলেছি। বিএনপি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করবে না।
এনটিভি অনলাইন : র্যাব তো আপনাদের আমলে তৈরি। এখন বিএনপি বলছে, ক্ষমতায় গেলে র্যাব বিলুপ্ত করা হবে। আসলেই কি তা সম্ভব?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : র্যাবের ভূমিকা যদি নেতিবাচক হয়, তাহলে করা হবে। শুধু র্যাব কেন, যেকোনো বাহিনী যদি এটা করে ভাবতে হবে, পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা আইনের শাসন মেনে চলি। মিথ্যাচার করে, মামলা করে আইনের শাসনের বাইরে থেকে কোনো দেশ এগোতে পারে না।
এনটিভি অনলাইন : রাজনীতি নিয়ে মানুষের অভিযোগ হচ্ছে, এটা দিন দিন খারাপ মানুষের হাতে চলে যাচ্ছে। ভালো মানুষ রাজনীতিতে আসেন না। একটি দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আপনিও কি তা অনুভব করেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : হ্যাঁ করি। এটা যে আছে তা অস্বীকার করা যাবে না। ভালো, মেধাবী মানুষের রাজনীতিতে অনীহা আছে। রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে অনীহা আছে। কিন্তু রাজনীতি করতে গিয়ে জীবন বিসর্জন দিয়েছেন এমন রাজনীতিবিদ অনেক আছেন। ভালো রাজনীতিবিদের সংখ্যা আমাদের বাড়াতে হবে। যারা এ বিশ্বায়নের যুগে দেশকে সম্পৃক্ত করে এগুতে চান তাঁদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি সংখ্যা বাড়ানোর। এ ছাড়া রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণও কম। আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাড়ে ১১ শতাংশ নারী। আরো বাড়ানো উচিত। এটি ৩৩ শতাংশে নিয়ে যেতে পারলে আমি খুশি হব।
এনটিভি অনলাইন : নীতি-আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তরুণরাও তো রাজনীতিতে আসছে না। তরুণদের জন্য বিএনপি কি বিশেষ কিছু ভাবে?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : তরুণদের কথা ভেবে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে হবে। না পারলে এর প্রতিফলন রাজনীতিতে পড়বে। আমরা বলেছি, আমাদের বিশাল বিনিয়োগ থাকবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে। এখানে বিনিয়োগ না করলে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করা যাবে না। আমাদের দেশের মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে অন্যদেশে যাচ্ছে। কেন? সত্যিকারের উন্নয়ন হলে কি তারা যেত? দেশের ৪০ শতাংশ শিক্ষিত যুবক বেকার, যা দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ। মানবসম্পদের উন্নয়ন হলে এগুলো হবে না। এগুলো মাথায় রেখেই বড় ধরনের কর্মসূচি দিয়েছি আমরা। রূপকল্পে হিসাব করে, গবেষণা করেই কর্মসূচি দিয়েছি আমরা। সম্পদের বণ্টন ঠিকমতো হচ্ছে না। একটা শ্রেণি বিশাল ধনী হচ্ছে, অন্যরা বঞ্চিত হচ্ছে। বৈষম্য কমিয়ে একটা কল্যাণকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই আমরা।
এনটিভি অনলাইন : আপনি একসময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সামলেছেন, চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতিকে কি সরকার চাইলেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারত? নাকি এর মধ্যে অন্য কিছু আছে, যা সরকার চাইলেই করতে পারে না…
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : শুধু চাল কেন, সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে, গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। সারা বিশ্বে তেলের দাম কমে আর আমাদের দেশে বাড়ে। সরকার বড় বড় প্রজেক্টে টাকা বিনিয়োগ করছে। সেখানে অগ্রাধিকার দিয়ে তাঁরা টাকা খরচ করছে। তাঁরা নিজেদের লোক দিয়ে টাকাটা নিয়ে নিচ্ছে। আট হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু প্রকল্প এখন ২৮ হাজার কোটি টাকা। ফ্লাইওভার নির্মাণ খরচের টাকা দিন দিন বাড়ছে। কোন ইকোনমিক মডেল তাঁরা ফলো করছে? এটাকে ‘আওয়ামী ইকোনমিক মডেল’ ছাড়া তো কিছু বলা যাচ্ছে না! তাদের দলীয় লোক টাকা নিয়ে নিচ্ছে- এটা এখন প্রমাণিত। টাকা বাইরে পাচার হচ্ছে। এটা আমরা বলছি না, এটা প্রমাণিত। প্রতি বছর দেশ থেকে যদি এত টাকা পাচার হয়ে যায়, তাহলে দেশটা কোথায় যাচ্ছে? মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ার কথা। কিন্তু তাদের ক্রয় ক্ষমতা আট শতাংশ হারে কমে গেছে। এটা অলিগার্কি (ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর শাসন) ছাড়া তো আর কিছু না। একইসঙ্গে আছে শোচনীয় মানবাধিকার পরিস্থিতি। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে বাংলাদেশ। বিশ্বে দেশের অবস্থান ১৩৯তম। এ দেশের মানুষের অবস্থান কোথায় এ থেকেই বোঝা যায়। আমরা রূপকল্প-২০৩০ এ এসব বিষয় তুলে ধরেছি, যাতে মানুষ আওয়ামী লীগের দুঃশাসন সম্পর্কে সতর্ক হয়। মানুষ সেগুলো গ্রহণ করছে। তাঁরা এসবের জবাব দেওয়ার জন্য তৈরি হয়ে আছে। মানুষের এই ক্ষোভ থেকে কেউ আওয়ামী লীগকে রক্ষা করতে পারবে না। আজ হোক, কাল হোক- মানুষ তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবেই।
এনটিভি অনলাইন : আপনাকে ধন্যবাদ।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : আপনাদেরও ধন্যবাদ।