সাপে কেটে গৃহবধূর মৃত্যু, বিষ আতঙ্কে অসুস্থ ৮২
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলায় সাপে কেটে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। ওই গৃহবধূকে স্পর্শ করলে অন্যদের শরীরে বিষ ছড়িয়ে পড়ছে এমন আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়েছে কমপক্ষে ৮২ জন। আর এসব মানুষকে সারিবদ্ধ করে বসিয়ে রেখে ঝাড়ফুঁক করে চলেছেন ওঝা।
বৃহস্পতিবার উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের চরভাগা গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, বিষ অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি সঠিক নয়। এটি ওঝার অপব্যাখ্যা। মানুষগুলো আতঙ্কিত হয়ে অসুস্থ হতে পারে।
সাপের দংশনে মৃত গৃহবধূর নাম লিপি বেগম (৩৫)। তিনি ওই গ্রামের রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী।
লিপি বেগমের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে লিপি বেগমকে তাঁর ঘরে সাপে ছোবল দেয়। এতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে বাড়ির অন্য লোকেরা তাঁর পায়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে দেন। পরে খবর দেওয়া হয় চরভাগা গ্রামের ওঝা বাচ্চু বকাউলকে। এ সময় প্রাথমিকভাবে বাচ্চু বকাউল মোবাইল ফোনে পানি পড়ে দেন। সেই পানি লিপি বেগমকে খাওয়ানো হয়। একপর্যায়ে লিপি বেগমের নাক-মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে থাকে। তখন দ্রুত তাঁকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাত সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসক লিপি বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন।
লিপিকে যাঁরা ছুঁয়েছেন তাঁদের দেহে বিষ ছড়িয়ে পড়েছে এমন আতঙ্কেই নারী-শিশুসহ অন্তত ৮২ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তবে তাঁদের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়নি। তাঁদের শরীর থেকে সাপের বিষ নামাতে প্রথমে হাতে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। এরপর তাঁদের সবাইকে হাতে হাত ধরে সারিবদ্ধভাবে গোল করে বসিয়ে রাখা হয়। স্থানীয় ওঝা বাচ্চু ড্রাম পিটিয়ে তন্ত্রমন্ত্র পাঠ করে সাপের বিষ নামাতে থাকেন।
একজনের কোমরের সঙ্গে একটি সাদা কাপড় বেঁধে মাটির হাঁড়ি নিয়ে ঝাড়ফুঁক আর পড়া পানি ছিটাতে শুরু করেন ওঝা। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত চলে তাঁর এই ঝাড়ফুঁক।
এ খবর চাউর হলে আশপাশের গ্রাম থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ সাপের বিষ নামানো দেখার জন্য ওই গ্রামে গিয়ে ভিড় করেন।
নিহত লিপি বেগমের ফুফাতো ভাই আছাদুজ্জামান রিপন (৩৮) বলেন, ‘দুপুরে রান্নাঘরে লিপিকে সাপে ছোবল দেয়। স্থানীয় ওঝার পানি পড়া খাওয়ার পর লিপির মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে শুনতে পাই লিপিকে যারা ছুঁয়েছে তাদের শরীরে বিষ ছড়িয়ে পড়েছে। আবার ওই সব মানুষকে যারা ছুঁয়েছে তারাও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এভাবে ৮২ জন অসুস্থ হয়েছে।’
লিপির বোন হাছনা বেগম বলেন, তাঁর বোনকে সাপে ছোবল দেওয়ার খবর শুনে তাঁরাই প্রথমে এসেছেন। প্রথমে ওঝা পানি পড়া দিয়েছিল। পরে তাঁকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। লিপিকে স্পর্শ করায় তাঁদের কোনো সমস্যা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ওঝা বাচ্চু বকাউল (৫০) বলেন, ‘লিপিকে সাপে ছোবল দিয়েছে। লিপিকে যারা ধরেছে সবার শরীরে সাপের বিষ ছড়িয়ে পড়েছিল। আমি ঝাড়ফুঁক দিয়ে সবাইকে সুস্থ করে দিয়েছি।’
কীভাবে সাপের বিষ একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে গেল জানতে চাইলে তার কোনো জবাব দেননি ওঝা বাচ্চু।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, সাপে কাটা রোগীরকে স্পর্শ করলে বিষ অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি সঠিক নয়। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। মানুষগুলো আতঙ্কে বা অন্য কোনো কারণে অসুস্থ হতে পারে। ওঝার দেওয়া চিকিৎসায় তারা আরো অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তাদের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া উচিত।
সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল হক আকন্দ বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। সাপের কামড়ে একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। লোক অসুস্থ হওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। এটি একটি গুজব।’