ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত শোলাকিয়া
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/07/17/photo-1437106286.jpg)
উপমহাদেশের বৃহত্তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৮৮তম ঈদ জামাত।
সুষ্ঠুভাবে জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে এরই মধ্যেই জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে পৌরসভা, জনস্বাস্থ্য, গণপূর্ত, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডসহ (পিডিবি) অন্যান্য বিভাগের প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ পর্যায়ে। এর অংশ হিসেবে সম্পন্ন হয়েছে নামাজের কাতারের জন্য লাইন টানা, মাঠ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নকরণ, পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও রঙের প্রলেপ দেওয়ার কাজ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ কমিঠির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) জিএসএম জাফরউল্লাহ জানান, মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে লাখ লাখ মুসুল্লির অংশগ্রহণে এবারও উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ডিসি জানান, নিরাপদে জামাত অনুষ্ঠানের জন্য নেওয়া হয়েছে চার স্তরের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঈদের দিন মাঠ ও আশপাশের এলাকায় মোতায়েন থাকবে এক হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য। মাঠের প্রতিটি প্রবেশ পথে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করা হবে আগত মুসল্লিদের। নাশকতা মোকাবিলায় টাওয়ার এবং ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা দিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত পর্যবেক্ষণ করা হবে। সেই সঙ্গে মাইন ডিটেক্টর দিয়ে বিস্ফোরক অনুসন্ধানের মাধ্যমে মাঠের কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। মাঠের নিরাপত্তায় বিপুলসংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করবে র্যাব ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ অন্যান্য বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে এরই মধ্যে জেলায় বাতিল করা হয়েছে পুলিশের ছুটি।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) আনোয়ার হোসেন খান জানান, গৃহীত ব্যবস্থার কারণে বরাবরের মতো এবারও মুসুল্লিরা নিরাপদে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
বিভিন্ন গ্রন্থে প্রাপ্ত ইতিহাস থেকে জানা যায়, মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খান বাহাদুর কিশোরগঞ্জের জমিদারি প্রতিষ্ঠার পর ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় সাত একর জমির ওপর এ ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম অনুষ্ঠিত জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন বলে মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখি মাঠ’। সেখান থেকে উচ্চারণের বিবর্তনে নাম ধারণ করেছে আজকের শোলাকিয়া মাঠ।
বিশাল এই মাঠের মধ্যে মোট কাতার রয়েছে ২৬৫টি। প্রতি কাতারে ৫ শতাধিক মুসুল্লি নামাজে অংশগ্রহণ করে থাকেন। সেই সঙ্গে মাঠের বাইরে আশপাশের বিরাট এলাকাজুড়ে ঈদের জামাতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা মিলিয়ে জামাতে অংশগ্রহণকারী মুসল্লির সংখ্যা আড়াই থেকে তিন লাখ ছাড়িয়ে যায় বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।
মাঠের ঐতিহ্য ও সুনামের কারণে প্রতি বছরই মুসুল্লির সংখ্যা বাড়ছে। জামাতে অংশগ্রহণের জন্য ঈদের দুই-তিন দিন আগে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিদের আগমন শুরু হয়। আগত মুসুল্লিরা ঈদগাহ মসজিদ, গেস্ট হাউস এমনকি ঈদগাহের খোলামাঠে রাত্রি যাপন করে থাকেন। দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতে অনেক বিদেশি মুসল্লিও অংশগ্রহণ করে থাকেন।
এ বিষয়ে শোলাকিয়া মাঠ জামে মসজিদের ইমাম লুৎফুর রহমান গোলাপ বলেন, লাখ লাখ মুসুল্লির অংশগ্রহণে বিশাল জামাতে দোয়া কবুল হয়-এমন বিশ্বাসের কারণেই মুসল্লিরা দূর-দূরান্ত থেকে এই মাঠে ছুটে আসেন।
ঈদ জামাতে দূর থেকে মুসুল্লিদের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে ‘শোলাকিয়া স্পেশাল’ নামের দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। একটি ট্রেন সকাল পৌনে ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে এবং অপর ট্রেনটি সকাল ৬টায় ভৈরব থেকে কিশোরগঞ্জ শোলাকিয়া মাঠের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। নামাজ শেষে ট্রেন দুটি দুপুর ১২টার দিকে ছেড়ে যাবে কিশোরগঞ্জ থেকে।
এবারের ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়। ঈদের জামাত পরিচালনা করবেন মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। জামাতে শরিক হওয়া বিপুল মুসল্লির দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নামাজ শুরুর পাঁচ মিনিট আগে তিনটি, তিন মিনিট আগে দুটি ও এক মিনিট আগে একটি শটগানের গুলি ছোড়া হবে।