ভৈরবে দুস্থ প্রতিবন্ধীদের মধ্যে বস্ত্র ও টাকা বিতরণ
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/07/20/photo-1437401411.jpg)
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার কালিকাপ্রসাদ এলাকায় আজ সোমবার তিন শতাধিক দুস্থ প্রতিবন্ধীর মধ্যে বস্ত্র ও টাকা বিতরণ করেছে স্থানীয় সংগঠন দুস্থ প্রতিবন্ধী কল্যাণ ফাউন্ডেশন।
এলাকার সামর্থ্যবানদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে তিন বছর ধরে ঈদের তৃতীয় দিন এ উদ্যোগের আয়োজন করে আসছে সংগঠনটি।
আজ দুপুর ১টার দিকে কালিকাপ্রসাদ মিয়াবাড়ি মাঠে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. সায়দুল্লাহ মিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রতিবন্ধীদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করেন।
উপজেলার কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের আকবর নগর গ্রামের আব্দুল হামিদ তাঁর জন্মান্ধ দুই কিশোর সন্তান নাজু মিয়া ও কাদির মিয়াকে নিয়ে আসেন ওই অনুষ্ঠানে। তিনি এনটিভি অনলাইনকে জানান, তাঁর পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে নাজু মিয়া ও কাদির মিয়া জন্মান্ধ। কৃষি শ্রমিক আব্দুল হামিদ কোনো ঈদেই ছেলেমেয়েদের নতুন কাপড় দিতে পারেন না। আজ তিন বছর ধরে এই সংগঠন থেকে তাঁর দুই প্রতিবন্ধী ছেলে কাপড় পেয়ে আসছে। তিনি সংগঠনটির সাথে জড়িত সবার মঙ্গল কামনা করেন।
একই গ্রামের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়ে রাবেয়া খাতুনের দরিদ্র বাবা ইলিয়াস মিয়া মেয়ের জন্য একটি শাড়ি কাপড় পেয়ে খুশিতে তাঁর চোখে পানি এসে যায়। তিনি জানান, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়ের বাবা হিসেবে সমাজের কাছে নিজেকে খুব ছোট মনে হয়। মেয়ে বয়সে বিয়ের উপযুক্ত হলেও বিয়ে দিতে পারেননি। মেয়ে পালিত হচ্ছে এখনো নিজের সংসারে। এই অনুষ্ঠানে এসে আরো শত শত প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েকে দেখে নিজেকে আর ছোট মনে হচ্ছে না বলে এনটিভি অনলাইনকে জানালেন তিনি।
কালিকাপ্রসাদ দক্ষিণ গ্রামের যুবক রাজিব মিয়া। তিনি সুষ্ঠু-সবল হয়ে জন্ম নিলেও তিন বছর বয়সে এক হাতুড়ে চিকিৎসকের অপচিকিৎসার শিকার হয়ে আজ প্রতিবন্ধী। শিশু বেলায় পায়ের ফোঁড়ার চিকিৎসা করাতে গিয়ে ভুল চিকিৎসায় পচন ধরে যাওয়ায় তাঁর একটি পা কেটে ফেলতে হয়েছিল। সে থেকে তিনি প্রতিবন্ধী। তিনি মা-বাবার সচেতনতাসহ গ্রাম্য ওই সব হাতুড়ে চিকিৎসককের কবল থেকে শিশুদের রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এর আগে সংগঠনটির সভাপতি হাজি মো. শাহজাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন নির্বাহী পরিচালক মো. মাসুদ রানা। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক ইমরান মিয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক মো. বসির উদ্দিন, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. ইয়াসিন খান, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) জেলা কমিটির প্রচার সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান কবির, কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফজলুল কবির, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ফারুক মিয়া, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. খালেদ মিয়া, মৌলভী আবদুস ছাত্তার প্রমুখ।
বক্তারা তাঁদের আলোচনায় বলেন, প্রতিবন্ধীরা আজ সমাজ বা রাষ্ট্রের বোঝা নয়। প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও সুষ্ঠু লালন পালনে তারাও পরিণত হতে পারে সম্পদে। এ ক্ষেত্রে তাঁরা প্রতিবন্ধী সন্তানের অভিভাবকদের আরো বেশি সচেতনতা ও যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য রাষ্ট্র প্রদত্ত বিভিন্ন সুবিধা গ্রহণ করে সন্তানদের সম্পদে পরিণত করতে হবে।
তিন বছর ধরে চলমান এই উদ্যোগে সমাজের বিত্তবানদের আরো বেশি করে এগিয়ে আসার আশাবাদ ব্যক্ত করে সংগঠনটির সভাপতি হাজি মো. শাহজাহান ও নির্বাহী পরিচালক মো. মাসুদ রানা এনটিভি অনলাইনকে জানান, ২০১৩ সালের ঈদুল ফিতরে অল্প পরিসরে শুরু করা এ কার্যক্রম আজ অনেকটাই বড়সড় আকার ধারণ করেছে। সরকারি কোনো অনুদান বা সহায়তা ছাড়াই এবার ৩০৫ প্রতিবন্ধীর মধ্যে শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস ও টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
ধীরে ধীরে প্রতিবছর এর আকার ও পরিধি আরো বাড়ানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন তাঁরা দুজনেই।