রাজন হত্যা : ছেলেকে পুলিশে দিলেন বাবা
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/07/22/photo-1437586663.jpg)
সিলেটে শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে বাদল মিয়া নামের এক যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন তাঁর বাবা। আজ বুধবার রাত ১০টার দিকে কুমারগাঁওয়ের শেখপাড়া এলাকার বাসিন্দা সুলতান আহমদ এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তাঁর ছেলে বাদলকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
এই হত্যা মামলায় এরই মধ্যে আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া পাঁচ আসামির মধ্যে একাধিকজনের জবানবন্দিতে রাজন হত্যা সম্পৃক্ততায় বাদলের নাম উঠে আসে।
পুলিশ জানায়, জবানবন্দিতে বাদলের নাম উঠে আসার পর পুলিশ শেখপাড়া এলাকায় গিয়ে বাদলকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে অনুরোধ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার সন্ধ্যায় বাদলের বাবা সুলতান আহমদ ছেলেকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসেন। এ সময় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তিনি নিজের ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
বাবা সুলতান আহমদ অশ্রুসজল চোখে নিজের ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার সময় ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন। পুলিশ ভ্যানে ওঠার আগে বাবার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে বাদল নিজেকে নির্দোষ হিসেবে দাবি করেন।
রাজনকে হত্যার দিন ৮ জুলাই বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে যায় উল্লেখ করে বাদল মিয়া জানান, এ সময় রাজন প্রায় মৃত অবস্থায় পড়েছিল। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওয়ার্কশপে রাখা একটি মাইক্রেবাসের চাবি এনে দিতে শামীম নির্দেশ দিলে চাবি এনে দেন বাদল।
জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন জানান, বাদলকে এলাকাবাসী পুলিশে তুলে দিয়েছে। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আলোচিত রাজন হত্যাকাণ্ডের ঘটনার এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মুহিত আলম, ময়না মিয়া, দুলাল আহমদ, নূর আহমদ এবং প্রত্যক্ষদর্শী আজমত ও ফিরোজ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গত ৮ জুলাই সিলেট শহরতলির কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডে প্রকাশ্যে শিশু রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় নির্যাতনের ভিডিওচিত্রও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়। লাশ গুম করার সময় স্থানীয় লোকজন হাতেনাতে আটক করেন সিলেট সদর উপজেলার শেখপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মুহিত আলমকে। পরে মুহিতকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এ ঘটনায় মুহিত, তাঁর ভাই কামরুল ইসলাম, আলী হায়দার ও স্থানীয় চৌকিদার ময়না মিয়া লালকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন রাজনের বাবা।
গত ১৩ জুলাই পুলিশ মুহিতের স্ত্রী লিপি বেগম ও আত্মীয় ইসমাইল হোসেন আবলুসকে পৃথক স্থান থেকে আটক করে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় পরে লিপিকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। তিন নম্বর আসামি কামরুল সৌদি আরবে পালিয়ে গেলে ১৩ জুলাই প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযোগিতায় তাঁকে আটক করা হয়। পরে তাঁকে সেখানকার পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এ ছাড়া রাজন হত্যাকাণ্ডে উৎসাহ দেওয়ার অভিযোগে দুই প্রত্যক্ষদর্শী আজমত উল্লাহ ও ফিরোজ আলীকে ১৪ জুলাই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই দিন রাত ১০টার দিকে সিলেট শহরতলির টুকেরবাজার এলাকা থেকে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি স্থানীয় চৌকিদার ময়না মিয়া লালকে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন ১৫ জুলাই দুপুরে শহরতলির শেখপাড়া থেকে এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় আরেক আসামি দুলালকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার শুরুতে দুলালের নাম এজাহারে না থাকলেও রাজনকে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে এজাহারে নাম অন্তর্ভুক্ত করে পুলিশ। রাজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা মুঠোফোনে ভিডিও ধারণকারী নূর আহমেদকে ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় শহরতলির জাঙ্গাইল গ্রামের স্বজনরা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরের দিন ১৬ জুলাই সকালে আসামি আলী হায়দারকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় সদর উপজেলার শেখপাড়া গ্রামের লোকজন।