রোহিঙ্গা-যাত্রার শেষ ধাপ যেন ‘মৈত্রী সড়ক’
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় রোহিঙ্গাদের জন্য আগেই একটা ক্যাম্প ছিল কুতুপালংয়ে। নতুন করে বালুখালীতে আরেকটি ক্যাম্প করা হয়েছে। ওই ক্যাম্পটি পাহাড়ের ওপর। টেকনাফের দিকে গেলে ওই ক্যাম্পের আগেই চোখে পড়বে হাতের বাম পাশে একটি রাস্তা। সেখানে সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। মাটি ফেলা হয়েছে। শুরুতে পাথরে ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক, বালুখালী-ঘুমধুম’ নামফলকও আছে।
মিয়ানমার থেকে আশ্রয় নেওয়া এক রোহিঙ্গা নারী তাঁর শাড়ি শুকাতে দিয়েছেন ওই নামফলকের ওপর। সেখানে ঝুলছে রোহিঙ্গা শিশুর শার্ট-প্যান্টও।
মিয়ানমারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ সম্পর্কসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর উদ্দেশে ২০১৫ সালে শুরু হয় ওই সড়ক নির্মাণের কাজ। সড়কের বিস্তৃতি কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলা ও বান্দরবান উপজেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় দুই কিলোমিটার। বর্তমানে প্রকল্পটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৬ ইসিবি বাস্তবায়ন করছে।
তবে বালুখালীতে যেদিক দিয়ে সড়কটি শুরু হয়েছে, সেখানে এখন ভিড় আর জটলা লেগেই থাকে। যেসব রোহিঙ্গা পরিবার নতুন আসছে, এখনো ভাসমান অবস্থায় আছে, তাঁরা ওই নির্মাণাধীন সড়কের মাথায় বসে থাকছে। কোনো ত্রাণের যানবাহন এলে চলে যাচ্ছে ওই সড়কের মাথায়। বেশ খোলামেলা জায়গা বলে সেখানেই রোহিঙ্গা পরিবারদের লাইনে দাঁড় করিয়ে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। অনেক রোহিঙ্গা পরিবার মনে করছে ওই সড়কের ওই প্রান্তে দাঁড়ালেই ত্রাণ মেলে। আর সেখানে দাঁড়িয়েই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা।
উখিয়ার শাপলাপুর, আনজুমানপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে রোহিঙ্গা পরিবারগুলো ছোট ছোট ট্রাকে করে বালুখালী আসে। ট্রাকগুলো থামছে ওই মৈত্রী সড়কের মুখেই। সেখানেই একটি পাশে দাঁড়ালে গাড়ি থেকে নামতে থাকে নারী, পুরুষ ও শিশু রোহিঙ্গা।
মিয়ানমারের উচ্ছেদ আর নির্যাতনের কারণে প্রায় ১০ থেকে ১৫ দিন আগে ঘরবাড়ি ছাড়ে এসব মানুষ। দিনের পর দিন হেঁটে, নদী পার হয়ে রোহিঙ্গা পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে আসে। গতকাল সোমবার বালুখালীতে দাঁড়িয়ে দেখা গেল, দেশহীন হয়ে পড়া মানুষের দীর্ঘ যাত্রা যেন বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়কে এসে শেষ হচ্ছে।