সোনার বিনিময়ে নাফ নদী পার
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হাড়িয়াখালী গ্রামের খালটি স্থানীয়ভাবে বড়দেরা খাল নামে পরিচিত। খালটি মিলেছে নাফ নদীতে। এই পথ দিয়ে আসা অন্য অনেক রোহিঙ্গার মতো এনায়েত উল্লাহ তাঁর কন্যাশিশুকে নিয়ে খালের পাড়ে কাদামাটিতে নামলেন। মিয়ানমার থেকে নৌকায় নাফ নদী পেরিয়ে এসেছেন শাহপরীর দ্বীপে। সেখান থেকে হাড়িয়াখালী।
নাফ নদী পেরোতে এনায়েতকে পাঁচ আনা সোনা দিতে হয়েছে নৌকার মালিক ও মাঝিকে। এনায়েত জানালেন, মিয়ানমার থেকে নাফ নদী বিনা পয়সায় পার হওয়া যায় না। নৌকার মালিক ও মাঝিদের টাকা দিয়ে আসতে হয়। প্রাণ বাঁচাতে দ্রুত নৌকায় উঠতে হয় রোহিঙ্গাদের। উপায় না দেখে যা চায়, তাই দিয়ে নৌকায় উঠতে হয় তাঁদের।
এনায়েত উল্লাহর সঙ্গে এসেছেন তাঁর মা, স্ত্রী ও দুই বছরের শিশু। তিনি জানান, মিয়ানমারের সেনা ও স্থানীয় সন্ত্রাসীরা দলেবলে গ্রামে ঢোকে। এরপর সবাইকে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে বলে। এটা বলেই ‘লইঞ্চা’ নিক্ষেপ করে। এনায়েত জানালেন, লইঞ্চা এক ধরনের বোমা। এটা ঘরের দিকে মারলে একসঙ্গে কয়েকটা ঘরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে।
এনায়েত জানান, তখন হাতের কাছে যা থাকে, তা নিয়েই দ্রুত বেরিয়ে যেতে হয়। জিনিসপত্র গোছানোরও সময় থাকে না। তিনি জানান, তাঁর মায়ের কাছে কিছু সোনা ছিল। তা পুঁজি করেই বেরিয়ে আসেন তাঁরা। পাহাড়ে, বনে কাটিয়েছেন পাঁচ দিন। এরপর শুরু করেছেন হাঁটা। একপর্যায়ে নাফ নদীর তীরে আসেন। কিন্তু বিনা পয়সায় নাফ নদী পাড়ি দেওয়ার ক্ষমতা নেই কারো।
এনায়েতের কাছে নগদ টাকা তেমন ছিল না। লুকিয়ে আনা কিছু সোনা বের করেন এনায়েত। নৌকার মালিক নদী পার করিয়ে দেওয়ার জন্য পাঁচ আনা সোনা দাবি করেন। এনায়েতের আর কোনো উপায় ছিল না। ওই পাঁচ আনা সোনার বিনিময়ে মাঝি তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে নদী পার করে দেয়।