‘ছয় মাসে ৪৯২ ধর্ষণ’
গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে ছয় মাসে দেশে ৪৯২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। নারী অধিকার রক্ষায় কর্মরত বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা ইউএনবি। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালে সারা দেশে ৯৩৯টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
তবে এ সময়ে মাত্র ১০০টি নারী ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনে করে, ধর্ষণের অনেক ঘটনায় ‘অপ্রকাশিত’ থেকে যায়।
রাজনৈতিক-সামাজিক চাপের কারণে অনেক নির্যাতিত নারীই ধর্ষণের ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করতে পারেন না। পাশাপাশি এ জন্য বিচারের দীর্ঘসূত্রতাকেও দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞ ও আন্দোলনকারীরা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে ১০০টি ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে। যদিও এর বাইরে অনেক ঘটনাই নথিভুক্ত হয় না।
সামাজিক পরিস্থিতি ও মান-সম্মানের ভয়ে অনেকেই এসব ঘটনা প্রকাশ করতে চায় না। আবার অনেক ক্ষেত্রে নির্যাতনের ঘটনা মোবাইল ফোনে ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয় নির্যাতিতাকে। ফলে ভয়ে অনেকেই ঘটনা চেপে যায় বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধী পার পেয়ে যায় কারণ নির্যাতিতার পরিবার আদালতে দাঁড়াতে চান না।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ওমেনস ল’ইয়ারস অ্যাসোসিয়েশনের মামলা ব্যবস্থাপক অ্যাডভোকেট ফাতেমা আক্তার বলেন, এসব ক্ষেত্রে নির্যাতিতা নারী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই জরুরি। তারা সেটি পান না।
রাষ্ট্রপক্ষ যখন মামলাগুলো পরিচালনা করে, তখন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে একধরনের অবহেলা থাকে বলেও অভিযোগ করেন ফাতেমা আক্তার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আয়েশা মাহমুদা বলেন, যখন অপরাধী পার পেয়ে যায়, তখন সে আরো বেপরোয়া হয়ে অপরাধ করতে উৎসাহী হয়।
‘অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধীরা রাজনৈতিক সহযোগিতা পান’ উল্লেখ করে আয়েশা মাহমুদা আরো বলেন, মাদক ও ইন্টারনেটে পর্নোর সহজলভ্যতা এ ধরনের অপরাধ সংগঠনে অনুকূল অবস্থা তৈরি করে দিচ্ছে।
গত পহেলা বৈশাখে টিএসসি চত্বরে নারী লাঞ্ছনার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রতিবাদকারী বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি লিটন নন্দী বলেন, যদি এ ধরনের নষ্ট সংস্কৃতিকে রোখা না যায়, তাহলে ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
পহেলা বৈশাখের ঘটনায় জড়িতদের কাউকেই এখনো গ্রেপ্তার না করায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এ ছাত্রনেতা।