শিশু নির্যাতনে ‘সাজানো ছবি’: চারজনের বিরুদ্ধে মামলা
সাতক্ষীরায় দুই শিশুকে গাছের সঙ্গে বেঁধে সাজানো ছবি তৈরি করে সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার অভিযোগে দুই সাংবাদিকসহ চারজনের নামে মামলা করা হয়েছে।
গতকাল রোববার রাতে শ্যামনগর উপজেলার জয়নগর গ্রামের আনিছুর রহমান বাদী হয়ে তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি আইনের ২০০৬ এর ৫৭ (১) ধারায় এ মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর ৪২)।
মামলার আসামিরা হলেন উপজেলার বাদঘাটা গ্রামের কলেজ শিক্ষক ও স্থানীয় সাংবাদিক সামিউল মনির, গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক রবিউল ইসলাম, গোপালপুর গ্রামের আবদুর রশিদ ও জয়নগর গ্রামের ইউনুছ গাজী। তাঁদের মধ্যে রবিউল ইসলাম সাতক্ষীরার একটি দৈনিকের কাশিমারি ইউনিয়ন প্রতিনিধি হিসেবে সাজানো ছবি পাঠিয়ে সাংবাদিকতার নীতিবিরোধী কাজ করেছেন। ওই পত্রিকা কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে তাঁকে অব্যাহতিও দিয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা মিথ্যা ও আজগুবি তথ্য সরবরাহকারী ও সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্টকারী। তাঁরা পরস্পরের সহায়তায় ১৭ জুলাই উপজেলার জয়নগর গ্রামের আবদুল হামিদের ছেলে মো. নাসিম (১০) ও ইসমাইল তরফদারের ছেলে মো. ইয়াছিনকে (৯) ইসমাইল তরফদারের বাড়ি থেকে কয়েক গজ দূরে একটি ছত্রাকযুক্ত আমগাছের সঙ্গে রশি ও শেকল দিয়ে বেঁধে ছবি তোলে।
পরে ওই ছবি ২১ জুলাই স্থানীয় দৈনিক পত্রদূত, ওয়েবসাইট, ফেসবুক ও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। এই ছবি তাঁরা শিশু নির্যাতন শিরোনামে প্রচার করায় তা সারা দেশে আলোচিত হয়। এতে রাষ্ট্র ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বাদী।
এ মামলার সাক্ষী করা হয়েছে জয়নগর গ্রামের আবুল গাজী, গোলাম মোস্তফা, আবু মুসা, গোলাম হোসেন ও অজিয়ার গাজীকে।
গত ১৬ জুলাই শ্যামনগর উপজেলার কাশিমারি ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের দুই শিশু ইয়াসিন ও নাসিমকে বাড়ির পাশের খেজুর পাতার বেড়া তুলে খেলা করার অভিযোগে মারপিট করে রশি দিয়ে গাছের সঙ্গে বাঁধেন গ্রামের গোলাম মোস্তফা ও তাঁর ছেলে গোলাম হোসেন। এ ঘটনায় দুই পক্ষে মারামারি হয়।
এদিকে স্থানীয় সাংবাদিক রবিউল ও তাঁর সহযোগী ইলিয়াস তরফদার দুই দিন পর শিশু দুটিকে অন্য একটি গাছের সঙ্গে রশি ও শেকল দিয়ে বেঁধে ছবি তুলেন। ওই ছবি প্রথমে স্থানীয় পত্রদূত পত্রিকায় ছাপা হয়। পরে ওই ছবি অন্যান্য সংবাদপত্রে ছাপা হয় এবং ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।
সিলেটে শিশু শেখ সামিউল আলম রাজনকে নির্যাতন করে হত্যার কিছুদিনের মধ্যে এ ধরনের ছবি ছাপা হওয়ায় সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। পুলিশ শিশু নির্যাতনের অভিযোগে মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁর বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতনের মামলা হয়।
পরে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনা অনুসন্ধানে নামেন। শিশু দুটি পুলিশ কর্মকর্তাদের জানায়, তাদের নির্যাতন ঘটনার কয়েকদিন পর ভিন্ন একটি গাছের সাথে বেঁধে ছবি তোলে রবিউল ও ইলিয়াস তরফদার। এই শিশুরাই তাদের ঘর থেকে বের করে দেয় দ্বিতীয় দফায় কথিত নির্যাতনের জন্য ব্যবহৃত রশি ও শেকল।
এদিকে স্থানীয় লোকজন বলছে, সাজানো ছবির ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকা সত্ত্বেও একটি মহলের ইশারায় ইলিয়াস তরফদারকে মামলায় আসামি করতে রাজি হয়নি পুলিশ।
অপরদিকে গোপালপুরের নিরীহ ব্যক্তি আবদুর রশীদকে এই মামলায় আসামি করায় পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া ঘটনার সময় কলেজ শিক্ষক ও সাংবাদিক সামিউল মনির সাতক্ষীরার বাইরে ঢাকায় চিকিৎসাধীন ছিলেন বলেও জানিয়েছেন এলাকার লোকজন।
গ্রামবাসী মোস্তফাকে যেমন শিশু নির্যাতনকারী হিসেবে দায়ী করেন তেমনি রবিউল ও তাঁর সহযোগী ইলিয়াস তরফদারকেও সাজানো ছবির জন্য সরাসরি দায়ী করেন। এর সঙ্গে নির্যাতনের শিকার শিশু দুটির বাবাও রয়েছেন বলে জানায় তারা।