ঘরে ফিরছেন মিয়ানমার থেকে ফেরত আসা ব্যক্তিরা

মিয়ানমার থেকে ফেরত আসা ১৫৯ জন বাংলাদেশির মধ্যে ১৪২ জনকে নিজ জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন। আজ বুধবার দুপুর ১২টায় কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে তাঁদের নিজ জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
অবশ্য আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) অভিবাসীদের নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছাতে মানবিক সহায়তা দিচ্ছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে সবাই নিজ নিজ পরিবারের কাছে পৌঁছে যাবেন বলে আশা করছে আইওএম।
এই ১৪২ জন বাদে অপ্রাপ্ত বয়স্ক আরো ১৭ জনকে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির মাধ্যমে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার জেলা পুলিশ এই ১৭ জনকে কক্সবাজার আদালতে হাজির করলে এদের রেডক্রিসেন্টের মাধ্যমে নিজ নিজ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
আজ তারা প্রত্যেকেই পরিবারের কাছে পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সেক্রেটারি আবু হেনা মোস্তফা কামাল। এদের মধ্যে নরসিংদীর আটজন, নারায়ণগঞ্জের পাঁচজন, চট্টগ্রামের দুজন, ফরিদপুর ও বরিশালের একজন করে রয়েছে।
দুপুরে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক মিলনায়তনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদ জানান, মিয়ানমার থেকে ফিরে আসা ১৫৯ জন বাংলাদেশির বিষয়ে তাঁদের নিজ নিজ জেলায় প্রাথমিক তদন্ত সম্পন্ন করা হয়। তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে তাঁদের দেওয়া জবানবন্দিতে ১২টি জেলার ৯৭ জন দালালের নাম পাওয়া গেছে। এসব দালালের বিরুদ্ধে পাচারের অভিযোগে প্রতিটি জেলায় মানবপাচার আইনে আলাদা মামলা করা হবে। এদের নিজ নিজ জেলার পুলিশ এবং ঢাকায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মানবপাচারের এসব মামলা তদন্ত করবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবদুস সোবহান সাংবাদিকদের জানান, মিয়ানমার থেকে চতুর্থ দফায় আসা অভিবাসন প্রত্যাশী বাংলাদেশিদের বিজিবির কাছ থেকে গ্রহণ করার পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে নিজ জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। আইওএম তাঁদের মানবিক সহায়তা দিচ্ছে।
গত সোমবার দুপুরে মিয়ানমারের ঢেকিবনিয়ায় এক পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশের ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে এসব অভিবাসন প্রত্যাশী বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার আসিফ মুনীর জানিয়েছেন, ১৫৯ জনের মধ্যে দেশের ১০ জেলার বাসিন্দা রয়েছে। এর মধ্যে নরসিংদীর ৮০ জন, চট্টগ্রামের ১৮ জন, হবিগঞ্জের ১৭ জন, কিশোরগঞ্জের ১৩ জন, নারায়ণগঞ্জ ও ফরিদপুরের ১২ জন করে, শরীয়তপুরের তিনজন, নওগাঁর দুজন, নাটোর ও বরিশালের একজন করে রয়েছে।
গত ২১ মে মিয়ানমারের জলসীমা থেকে সাগরে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার হওয়া ২০৮ জন এবং ২৯ মে আরো ৭২৭ জন অভিবাসন প্রত্যাশীকে উদ্ধার করে দেশটির নৌবাহিনী। যার মধ্যে ৮ জুন, ১৯ জুন ও ২২ জুলাই তিন দফায় দেশে ফেরত আনা হয়েছিল ৩৪২ জনকে। ১০ আগস্ট চতুর্থ দফায় ফেরত আনা হয় আরো ১৫৯ জনকে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৫০১ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হলো।