‘দুটি ছেলে দুটি মেয়েকে অসুস্থ অবস্থায় নিয়ে যায়’
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/08/14/photo-1439570077.jpg)
মাদারীপুরে দুই স্কুলছাত্রী নিহতের ঘটনায় সদর উপজেলার মস্তফাপুর গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। কেউ মুখ খুলতে চাইছে না। এখনো হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাপন করতে পারেনি পুলিশ। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, প্রেমের সম্পর্কের জেরে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে।
urgentPhoto গতকাল বৃহস্পতিবার মাদারীপুরে দুই স্কুলছাত্রীকে অপহরণের পর নির্যাতন করে তাদের মুখে বিষ ঢেলে হত্যা করা হয় বলে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। এরা হলো মস্তফাপুর গ্রামের বিল্লাল শিকদারের মেয়ে সুমাইয়া (১৬) এবং একই গ্রামের হাবিব খাঁর মেয়ে হ্যাপি (১৫)। তারা দুজনই মস্তফাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
এরপর আজ শুক্রবার সকালে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নিহত দুই কিশোরীর পরিবারে চলছে মাতম। চারিদিকে শোকের ছায়া। গ্রামের মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভের পাশাপাশি আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না পুলিশি হয়রানির আশঙ্কায়। দু-একজন কথা বললেও তাদের মনে ছিল ভয়।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় মস্তফাপুর বাজারের দর্জি সূর্য বেগম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে আমি দোকানে এসে চিৎকারের শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি দুটি ছেলে দুটি মেয়েকে অচেতন অবস্থায় কোলে তুলে ভ্যানে নিয়ে যাচ্ছে।’
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বাজারের দোকানি জাহাঙ্গীর নাগাসী বলেন, ‘বিকেলে আমি দেখি দুটি ছেলে দুটি অসুস্থ মেয়েকে ভ্যানে তুলে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’
মাদারীপুর মস্তফাপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বোরহান খান বলেন, গত ১০ আগস্ট থেকে সুমাইয়া ও হ্যাপি স্কুলে অনুপস্থিত। তিনি এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন।
নিহত সুমাইয়ার মা আসমা বেগম বলেন, ‘আমার এক সুমাইয়া মারা গেছে। যদি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার হয় তাহলে হাজারো সুমাইয়া বেঁচে যাবে। আমি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমার সুমাইয়ার মতো আর কোনো মেয়েকে যেন অকালে প্রাণ হারাতে না হয়।’
নিহত হ্যাপির চাচি কেয়া বেগম ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
এদিকে আজ বিকেলে সদর থানায় সাতজনকে আসামি করে এ মামলা দায়ের করেন নিহত সুমাইয়ার বাবা বিল্লাল শিকদার। এ ছাড়া সকালে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আরো দুজনকে আটক করেছে। এ নিয়ে এ ঘটনায় চারজনকে আটক করা হলো।
এদিকে দুই কিশোরীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছে, এদের মধ্যে সুমাইয়ার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে ধর্ষণের কোনো আলামত এখনো পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ঘটনা তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম কুমার পালকে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল মোর্শেদ বলেন, ‘বিভিন্ন লোকেশন ও ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে রানার সঙ্গে হ্যাপি ও সুমাইয়া বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে গেছে। এসবের ছবি আছে এবং রয়েছে চিঠিও। এগুলো নেওয়ার জন্য হয়তো রানার কাছে গিয়েছিল তারা। না দেওয়ার কারণে দুজনই বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছে।’
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সরোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল, হ্যাপি ও সুমাইয়ার বাড়ি এবং এলাকা পরিদর্শন করে জানান, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি প্রেমঘটিত কারণে এটা ঘটতে পারে। জমিজমাসংক্রান্ত অথবা পারিবারিক কারণ এর সঙ্গে জড়িত কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ধর্ষণের কোনো আলামত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে পাওয়া যায়নি। তবে নিহত সুমাইয়ার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস জানান, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হবে। যাতে কোনো নিরীহ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।